ডেঙ্গুর সংকট নিরসনে ব্যক্তির চেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যেন ডেঙ্গু ঝুঁকি তৈরি করতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করা দরকার।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর এফডিসিতে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে আয়োজিত এক ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
উপাচার্য বলেন, এবার ডেঙ্গুর ড্যান টু ও ড্যান থ্রির প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। বিএসএমএমইউ’র গবেষণা অনুযায়ী ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আমদানিকৃত বিটিআই এডিস মশা নিধনে ৯২ শতাংশ কার্যকর। লার্ভা নিধনে আধুনিক প্রযুক্তিসহ উলবাকিয়া ব্যাক্টেরিয়া প্রয়োগ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। জেলা-উপজেলা পর্যায়সহ সারাদেশে ডেঙ্গু চিকিৎসার প্রটোকল অনুসরণ করে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজনসহ শুধু জটিল পরিস্থিতির ক্ষেত্রে রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা যেতে পারে। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখতে হবে। সরকারি হাসপাতালসমূহ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে আসছে। এডিস মশাবিরোধী অভিযানে জরিমানা হিসেবে আদায়কৃত অর্থ ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া সামর্থ্যহীন ব্যক্তির পরিবারকে প্রদান করা যেতে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে মহামারি বলা না হলেও এর ভয়াবহতা মহামারির চাইতেও কম নয়। সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে না পারলে ডেঙ্গু আক্রান্ত্র মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়বে। বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা গ্রহণে বেগ পেতে হচ্ছে। চিকিৎসাব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
ডেঙ্গু আক্রান্ত নিম্নআয়ের মানুষদের অবস্থা আরো করুণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকার বাইরের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য না আনার অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা বলছেন সব জেলাতেই ডেঙ্গু রোগীর যে চিকিৎসা হবে, ঢাকার হাসপাতালেও একই চিকিৎসা পাবে। এমন অবস্থায় প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ কেন অতিরিক্ত ঝামেলা, বেশি খরচ ও ঝুঁকি নিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ঢাকা নিয়ে আসছে? তাহলে মনে হতে পারে স্থানীয় পর্যায়ে চিকিৎসাসেবার প্রতি মানুষের আস্থার সংকট রয়েছে। ডেঙ্গুর এই ভয়াবহতার সময় ডাব ও স্যালাইন সিন্ডিকেট জনজীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে, যা মোটেই কাম্য নয়।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন রোগী প্রতি গড়ে ৫০ হাজার টাকা করে এই পর্যন্ত ৪০০ কোটি টাকা ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় সরকারের ব্যয় করেছে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় সরকারি ব্যয়ের নামে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি রয়েছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। কারণ ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের অনিয়ম নগরবাসীকে আস্থাহীন করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে এডিস মশার লার্ভা নিধনে বিটিআই ওষুধ আমদানি ও প্রয়োগ নিয়ে যে নাটকীয়তা ঘটেছে তার সঠিক ব্যাখ্যা নগরবাসী এখনো জানতে পারেনি। পর্যাপ্ত বাজেট থাকা সত্ত্বেও এডিস মশা নিধন করতে না পারায় ডেঙ্গুতেই এতো মানুষের মৃত্যুর দায়ভার কে নেবে, তা সাধারণ মানুষের জানার অধিকার রয়েছে।
‘নাগরিকদের দায়িত্বশীল আচরণই ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধ করতে পারে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয় ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের বিতার্কিকরা। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, টিভি প্রেজান্টার ডাক্তার ফাইজা রাহলা, জান্নাতুল বাকেয়া কেকা ও আসমা আক্তার নূপুর। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।