স্ত্রীর কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সোহানুর রহমান সোহান

বিনোদন

টাঙ্গাইলে স্ত্রীর কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় টাঙ্গাইল পুরাতন বাসস্ট্যান্ড মসজিদে জানাজা শেষে কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে সোহানুর রহমানের মরদেহ বুধবার রাতে টাঙ্গাইল শহরের পলাশতলী এলাকায় পৌঁছায়। এসময় গুণী পরিচালককে শেষবারের মতো একবার দেখতে ভিড় করেন স্বজন ও এলাকাবাসী। তার স্বজনরা জানিয়েছেন স্ত্রী ও তার (সোহানুর রহমান) ইচ্ছে ছিল মৃত্যুর পর তাদের দুইজনকে যেন পাশাপাশি কবর দেওয়া হয়। এজন্য টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হয়েছে।

স্ত্রীর মৃত্যুর পরদিনই মারা গেলেন ঢাকাই সিনেমার বরেণ্য পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। গত মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ব্রেইন স্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করেন তার স্ত্রী প্রিয়া রহমান। পরদিন বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর উত্তরার বাসায় ঘুমের মধ্যে তাঁর মৃত্যু সোহানুর রহমানের। গতকাল সন্ধ্যায় উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে সোহানকে হাসপাতালে আনা হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তানভীর ইসলাম তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি জানান সোহানকে মৃত অবস্থায় পেয়েছেন তাঁরা। পরিবারের বরাত দিয়ে অপূর্ব রানা জানান, গত পরশু মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে তাঁর স্ত্রী মারা যান। তার একদিন পর তিনিও চলে গেলেন। বাসায় ঘুমিয়েছিলেন তিনি। ঘুম থেকে আর জেগে উঠতে পারেননি। একদিনের ব্যবধানে দুইজনের মৃত্যু হওয়ায় শোকে পাথর হয়ে আছেন তাদের স্বজন ও এলাকাবাসী।

১৯৭৭ সালে নির্মাতা শিবলী সাদিকের সহকারী পরিচালক হিসেবে সোহানুর রহমান সোহান ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরপর তিনি শহীদুল হক খানের ‘কলমিলতা’ (১৯৮১), এজে মিন্টুর ‘অশান্তি’ (১৯৮৬) ও শিবলী সাদিকের ‘ভেজা চোখ’ (১৯৮৮) সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর ১৯৮৮ সালে প্রধান নির্মাতা হিসেবে সোহানুর রহমান সোহান আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’। তবে তিনি সাফল্য পান ১৯৯৩ সালে। সিনেমার নাম ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। এই সিনেমার মাধ্যমে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন এবং তারকাখ্যাতি পান প্রয়াত নায়ক সালমান শাহ, নায়িকা মৌসুমী ও কণ্ঠশিল্পী আগুন। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত অন্য সিনেমাগুলো হচ্ছে- ‘আমার দেশ আমার প্রেম’, ‘স্বজন’, ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’, ‘অনন্ত ভালোবাসা’, ‘স্বামী ছিনতাই’, ‘আমার জান আমার প্রাণ’, ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’, ‘কোটি টাকার প্রেম’, ‘সে আমার মন কেড়েছে’, ‘দ্য স্পিড’ ও ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’ ইত্যাদি। সোহানের ‘অনন্ত ভালোবাসা’ সিনেমার মাধ্যমেই আত্মপ্রকাশ করেছিলেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। বর্তমানে যিনি ঢালিউডের শীর্ষ তারকা। সোহানুর রহমান সোহান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে টানা দুইবার মহাসচিব, দুইবার সহসভাপতি এবং একবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তথ্য ও সম্প্র্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *