সবার জন্য সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন : প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ

সবার জন্য মর্যাদাপূর্ণ জীবন ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘বিশ্ব পরিবারের সমান সদস্য হিসেবে আমাদের অবশ্যই মর্যাদাপূর্ণ জীবন এবং সবার জন্য সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার সংকল্প করতে হবে।’

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী ভারতের নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানে ভারত মন্ডপম কনভেনশন সেন্টারে জি-২০ লিডারস সামিট ২০২৩-এ এক অধিবেশনে দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

এই প্রসঙ্গে তিনি ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আগামী দিনে একটি উন্নত বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে জি-২০ নেতাদের কাছে পাঁচটি সুপারিশ করেছেন।

সুপারিশগুলো হলো :

প্রথম- টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়ন জি-২০ -সহ সকল বহুপক্ষীয় উদ্যোগের আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকা উচিৎ।

দ্বিতীয়- স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর জন্য জি-২০ এর উচিৎ শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখা এবং একতরফা ট্যারিফ অগ্রাধিকার এবং ট্রিপস ছাড়ের সম্প্রসারণকে সমর্থন ও সহজতর করা, যাতে নির্বিঘ্ন ও টেকসই রূপান্তর নিশ্চিত করা যায়।

তৃতীয়- কৃষিপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মসৃণ, সময়োপযোগী ও প্রত্যাশিত সরবরাহ নিশ্চিত করতে জি-২০ ঝুঁকিপূর্ণ অর্থনীতির বাজার উন্মুক্ত রেখে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে।

চতুর্থ- শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে নারীকে (বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেক) সমান মনোযোগ দিতে হবে।

পঞ্চম- বিশ্বব্যাপী মানব উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য অংশীদার, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত ও অন্যান্য অংশীজনদের সহায়তায় দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ত্রিদেশীয় সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতিকে বিবেচনায় রেখে একটি ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার সময় এসেছে। আমি বিশ্বাস করি জি-২০ উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সহায়ক হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্নিত হয়েছে এবং খাদ্য, জ্বালানি ও সারের সঙ্কট সারা বিশ্বের মানুষের জীবনযাপনের ওপর অসহনীয় অবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যদিও আমরা এক পৃথিবী, এক পরিবারের কথা বলি; আমরা কি তা প্রমাণের মতো কিছু করছি? প্রতি রাতে ৮০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বা বিশ্ব জনসংখ্যার ১০ শতাংশ, না খেয়ে ঘুমায়। যেখানে, বিশ্ব প্রতি বছর সামরিক খাতে ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে, সেখানে মাত্র ২৬ ঘণ্টার জন্য সামরিক ব্যয় হয় ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। যা দিয়ে সবচেয়ে নাজুক সম্প্রদায়ের খাবার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’

এছাড়াও তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী বছরে নষ্ট হওয়া খাদ্য দিয়ে ২ বিলিয়ন মানুষকে খাওয়ানো যেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে ধনী দেশগুলো বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মতো দরিদ্রদের জন্য সাহায্য কমিয়ে দিচ্ছে।’

বাংলাদেশের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে গণতন্ত্র ও জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার দারিদ্র্য ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে, চরম দারিদ্র্য ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে এবং মাথাপিছু আয় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘টেকসই উন্নয়নের ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়ন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমরা এসডিজি বাস্তবায়ন ও অর্জনের জন্য একটি ‘হোল অব সোসাইটি’ (একটি নির্দিষ্ট দেশ বা এলাকায় বসবাসকারী মানুষের সমগ্র গোষ্ঠী) পদ্ধতি গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশ ২০২১ সালে এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার পেয়েছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। শিক্ষার হার ২০০৬ সালের ৪৫ শতাংশ থেকে গত দেড় দশকে ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৯৮ শতাংশ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে, যেখানে গড় আয়ু ২০০৬ সালে ৫৯ বছর থেকে এখন ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৮৪ থেকে কমে এখন ২১ এবং মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ৩৭০ থেকে ১৬১ হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৮ হাজার ৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে।

জাতিসঙ্ঘ একটি রেজুলেশন গৃহীত করে এই প্রচেষ্টাকে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায় প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী চ্যাম্পিয়ন।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স রিপোর্ট-২০২২ অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক, আধুনিক, উন্নত দেশ তথা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে চাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *