স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহ। অল্প সময়েই দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়েছিলেন এই তারকা। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান স্বপ্নের এই নায়ক। ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আজও বেঁচে আছেন দর্শকদের মণিকোঠায়। চলে গিয়েও সবার হৃদয়ে থেকে গেছেন তিনি। আজ স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহকে হারানোর ২৭ বছর পূর্ণ হলো।
ঢাকাই চলচ্চিত্রে পা রেখে অল্প সময়েই তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন সালমান শাহ। ক্যারিয়ারে মাত্র ছয় বছরেই বাজিমাত করেন তিনি। সালমান শাহ দেখতে যেমন সুদর্শন ছিলেন, তেমনি ভীষণ স্টাইলিশও ছিলেন। শুধু দেশেই নয়, বলিউডের অনেকে তারকাও ফলো করতেন স্টাইলিশ এই হিরোকে।
মডেলিং এবং টেলিভিশন নাটক দিয়ে নিজের অভিনয়ের যাত্রা শুরু করলেও, সবার নজর কাড়েন রুপালি পর্দায়। নব্বই দশকে ঢাকাই সিনেমার অন্যতম নন্দিত তারকা হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার। প্রথম চলচ্চিত্রেই নজর কাড়েন সিনেমাপ্রেমীদের। এতে সালমান শাহর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন মৌসুমী। রীতিমতো দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায় এই জুটি, যা ঢালিউডের সর্বকালের অন্যতম সেরা জুটি হিসেবে রয়ে গেছে।
ক্যারিয়ারে মোট ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন সালমান শাহ। আর সবগুলো সিনেমাই ছিল ব্যবসাসফল। পাশাপাশি সালমান শাহ-শাবনূরের জুটিও দর্শকদের ভীষণ প্রিয় ছিল।
১৯৭১ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট শহরে দাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন সালমান শাহ। তার বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী এবং মা নীলা চৌধুরী। তার প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। কিন্তু চলচ্চিত্র অঙ্গনে সালমান শাহ নামেই পরিচিত তিনি। পরিবারের দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ছেলে।
খুলনার বয়রা মডেল হাইস্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু সালমান শাহর। একই স্কুলে তার সহপাঠী ছিলেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী। ১৯৮৭ সালে রাজধানীর ধানমন্ডি আরব মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন জনপ্রিয় এই নায়ক। পরে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ধানমন্ডির মালেকা সায়েন্স কলেজ (বর্তমান ডক্টর মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ) থেকে বি কম পাস করেন সালমান শাহ।
ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট তার খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেন সালমান শাহ। তার স্ত্রী সামিরা হক ছিলেন একজন বিউটি পার্লার ব্যবসায়ী। দুটি চলচ্চিত্রও সালমান শাহর পোশাক পরিকল্পনাকারী হিসেবেও কাজ করেন সামিরা।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। আত্মহত্যা করেন সবার স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহ। প্রিয় তারকার মৃত্যুর খবরে মুহূর্তেই অন্ধকার নেমে আসে দেশজুড়ে। থমকে যায় সব কলরব। কেউ মেনে নিতেই পারছিলেন না যে, সালমান শাহ আর আমাদের মাঝে নেই। সালমান শাহর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে ঢাকাই চলচ্চিত্রেও। কেন এমন পথ বেছে নিলেন তিনি? এই প্রশ্ন আজও তাড়া করে বেড়ায় তার ভক্ত-অনুরাগীদের।
সালমান শাহর মৃত্যুর কারণটি আজও রহস্যই রয়ে গেছে। মৃত্যুর এত দিনেই জানা যায়নি তার মৃত্যুর আসল কারণ। তবে সালমান শাহর পরিবারের দাবী আত্মহত্যা নয় হত্যা করা হয়েছে তাকে। তবে নায়কের মৃত্যুর জন্য সামিরাকেই দায়ী করেন সালমান শাহর পরিবার। যদিও পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি। এমনকি প্রমাণও হয়নি সেটা।
সালমান শাহ ১৯৮৫ সালে বিটিভির ‘আকাশ ছোঁয়া’ নাটক দিয়ে অভিনয়ের যাত্রা শুরু করেন। পরে দেয়াল (১৯৮৫), সব পাখি ঘরে ফিরে (১৯৮৫), সৈকতে সারস (১৯৮৮), নয়ন (১৯৯৫), স্বপ্নের পৃথিবী (১৯৯৬) নাটকে অভিনয় করেন। নয়ন নাটকটি সে বছর শ্রেষ্ঠ একক নাটক হিসেবে বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। এ ছাড়া তিনি ১৯৯০ সালে মঈনুল আহসান সাবের রচিত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত পাথর সময় ও ১৯৯৪ সালে ইতিকথা ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেন।
সালমানশাহর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমা হলো ‘সুজন সখি’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘বিচার হবে’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘জীবন সংসার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেম পিয়াসী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বুকের ভেতর আগুন’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘স্নেহ’, ‘দেন মোহর’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘সত্যের মৃত্যু নাই’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘প্রিয়জন’সহ প্রভৃতি।