ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অতিবৃষ্টি ও প্রচণ্ড বাতাস অনুভূত হয়েছে। হয়েছে আকস্মিক বন্যাও। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশটিতে ইতোমধ্যে ২১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) দেশটির কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। একইসঙ্গে সামনের দিনগুলোতে আবারও বন্যা হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তারা। খবর এএফপির।
দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ রিও গ্রান্ডে দো সুলের গভর্নর এডুয়ারর্তো লেইতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ব্রাজিলে আঘাত হানা এই ঘূর্ণিঝড় আমাদের প্রদেশের ইতিহাসের অন্যতম মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল। বন্যার পানি কমে যাওয়ার পরই আমরা হতাহতের খবরটি জানতে পারি। এতে আমি শোকাহত। শুধু মুকুম শহরেই ১৫টি মরদেহ পাওয়া গেছে। এর মাধ্যম নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১।’
কর্মকর্তারা বলেন, সোমবার আঘাত হানা এই ঘূর্ণিঝড়ের আগে ছয় হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় ৩০০ মিলিমিটার বা প্রায় ১২ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়। এতে করে বন্যা ও ভূমিধস ঘটে। বৃহস্পতিবার থেকে আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় কর্তৃপক্ষ ফের বন্যার সতর্কতা দিয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জিজেডএইচের তথ্যমতে, পাঁচ হাজার মানুষের শহর মুকুম সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তাকওয়ারি নদীর পানি উপচে পড়ে ছোট শহরটির ৮৫ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যায়। শহরটির শতাধিক বাসিন্দাকে বাড়ির ছাদ থেকে উদ্ধার করা হয়।
মুকুম শহরের মেয়র মাতুয়েস টোরজান বলেন, ‘এখনও অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আমরা যে শহরটিকে চিনতাম, তা আগের মতো নেই।’
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সংহতি বার্তা দিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য তৈরি রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এএফপি জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে প্যাসো ফান্ডো শহরের একজন পুরুষ রয়েছেন। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ওই ব্যক্তি মারা যান। এ ছাড়া এক দম্পতি গাড়িসহ নদীর স্রোতের পানিতে ভেসে মারা গেছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, দক্ষিণাঞ্চলের ৬৭ মিউনিসিপ্যাল ঘূর্ণিঝড়টির শিকার হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫২ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়টির জেরে রিও গ্রান্ডে দো সুলের প্রতিবেশী প্রদেশ সান্টা ক্যাতারিনায় একজন মারা গেছে। স্থানীয় গণমাধ্যম জি-১ এ তথ্য জানিয়েছে।
উদ্ধার অভিযানের অংশ হিসেবে শত শত দমকলকর্মীদের পাশাপাশি সামরিক পুলিশ ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মীদের পাঠানো হয়েছে। বন্যার কারণে বিচ্ছিন্ন এলাকায় পৌঁছানোর জন্য উদ্ধারকর্মীদের হেলিকপ্টার দেওয়া হয়েছে। যোগাযোগমন্ত্রী পাউলো পিমেয়েনতা বলেন, ‘অনেক পরিবার আটকে পড়েছে। অনেকের জীবন এখনও হুমকিতে।’ একটি সরকারি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ওই অঞ্চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন পাউলো।