ভারত-পাকিস্তান উত্তাপের ম্যাচে সম্প্রীতির সুর

খেলাধুলা

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হয় না অনেক দিন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আইসিসি বা এসিসির ইভেন্ট মানেই এই দুই দলের লড়াই। যে ধারাবাহিকতায় আজ এশিয়া কাপে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে মুখোমুখি হবে রোহিত শর্মা ও বাবর আজমের দল। পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে হতে যাওয়া এ ম্যাচ ঘিরে বরাবরের মতোই দর্শক আগ্রহ তুঙ্গে। কিন্তু দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ঝাঁজালো আবহ একটু কম বলে মনে হয়?

সার্বিক পরিস্থিতি কিন্তু সেটাই বলছে। দুদিন আগে পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর যেমন বিরাট কোহলিকে প্রশংসায় ভাসালেন। কোহলির পরামর্শ তার ব্যাটিংয়ের উন্নতিতে কীভাবে সাহায্য করেছে, প্রকাশ করলেন সেটা। এশিয়া কাপের মতো আসরে ভারত-পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা একে অপরের প্রশংসা করছেন, সেটাও মুখোমুখি লড়াইয়ের ঠিক আগে। উত্তাপ নয়, এ যেন বন্ধুত্বের আবহ! এমন করে হয়তো ভাবাই যায়। তবে স্বাগতিক হওয়ার পরও পাকিস্তান যে ম্যাচটা নিজেদের মাঠে খেলতে পারছে না, এ বিষয়টিকেও তো মাথায় রাখতে হয়। তাই আজ বেলা সাড়ে ৩টায় যখন পাল্লেকেলেতে বল মাঠে গড়াবে, তখন নিশ্চিতভাবেই মাঠ ও গ্যালারিতে দুই দেশের সীমান্ত সম্পর্কের মতোই বৈরী ভাবটা ফিরে আসবে। কার জয় হবে সেখানে?

২০১৯ সাল থেকে প্রতিটি আইসিসি ইভেন্টেই দেখা গেছে ভারত-পাকিস্তান লড়াই। সে বছর ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ^কাপে মুখোমুখি হয় দুই দল। এরপর ২০২১ ও ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের গ্রুপ পর্বে দুই দলের লড়াই হয়। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের আগে এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেখানে গ্রুপ পর্ব ও সুপার ফোর মিলিয়ে দুইবার মুখোমুখি হয় ভারত ও পাকিস্তান; অর্থাৎ ২০১৯ সাল থেকে দুই ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত পাঁচবার মুখোমুখি তারা। ভারতের জয় সেখানে তিনটিতে, পাকিস্তান জিতেছে দুটিতে। এই লড়াইগুলোর শেষ চারটিই অবশ্য ছিল টি-টোয়েন্টি। ওয়ানডেতে গত বিশ^কাপের পর আর মুখোমুখি হয়নি দুই দল। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে হওয়া সবশেষ ওয়ানডে ম্যাচটি বৃষ্টি আইনে ৮৯ রানে জিতেছিল ভারত।

ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত ১৩২ বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। এর মধ্যে ভারতের জয় ৫৫টিতে, পাকিস্তানের জয় ৭৩টিতে। ৪টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়; অর্থাৎ এই পরিসংখ্যানে পাকিস্তান বেশ এগিয়ে। যদিও দুই দলের সবশেষ পাঁচ ওয়ানডের চারটিতেই শেষ হাসি হেসেছে ভারত। পাকিস্তানের শেষ জয়টা ঐতিহাসিক। ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ১৮০ রানের বড় জয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরেছিল সরফরাজ আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান।

শুধু এশিয়া কাপে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট মিলিয়ে মোট ১৬ বার দেখা হয় ভারত ও পাকিস্তানের। এর মধ্যে ১৩ ওয়ানডের ৭টিতে জিতেছে ভারত, ৫টি জিতেছে পাকিস্তান। ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে তিনবারের দেখায় দুইবার ভারত ও একবার জয় পায় পাকিস্তান।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিই এবারের আসরের প্রথম ম্যাচ হতে যাচ্ছে ভারতের। অন্যদিকে পাকিস্তানের এটি গ্রুপ পর্বে দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ। আসরের উদ্বোধনী দিনে দলটি নেপালকে হারিয়েছে ২৩৮ রানের বিশাল ব্যবধানে। ম্যাচটা ব্যাটে-বলে দারুণ প্রস্তুতিই হয়ে যায় পাকিস্তানের। আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো না হলেও বাবর আজম ১৫১ রানের ইনিংস খেলেন। ইফতিখার আহমেদ খেলেন ৭১ বলে ১০৯ রানের অপরাজিত ইনিংস। সুবাদে ৬ উইকেটে ৩৪২ রানের পুঁজি পায় পাকিস্তান। পরে শাদাব খানের স্পিনের সঙ্গে শাহিন শাহ আফ্রিদি ও হারিস রউফের পেসে নেপাল উড়ে যায়।

ম্যাচের আগের দিনই একাদশ ঘোষণা করে পাকিস্তান। ফখর, ইমাম, বাবর, রিজওয়ান, সালমান আগা, ইফতিখারদের নিয়ে পাকিস্তানে ব্যাটিং লাইনআপ দুর্দান্তই বলতে হবে। বোলিং লাইনআপে পেস ডিপার্টমেন্টে আছেন নাসিম শাহ, শাহিন আফ্রিদি, হারিস রউফ আর স্পিনে নেতৃত্ব দেবেন শাদাব খান, তার সঙ্গে রয়েছেন মোহাম্মদ নওয়াজ। কিন্তু সেই ব্যাটিংয়ের চেয়ে দলটির বোলিংই কি বেশি এগিয়ে? এশিয়া কাপের সম্প্রচারকারী চ্যানেলে বিরাট কোহলি যেমন বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, পাকিস্তানের শক্তি হলো ওদের বোলিং। ওদের দলে দারুণ কিছু বোলার আছে। যাদের দক্ষতা আছে যেকোনো মুহূর্তে ম্যাচের চিত্রটা বদলে দেওয়ার। তাই ওদের খেলতে গেলে নিজের সেরা ছন্দে থাকতে হবে।’ নেপালকে হারিয়ে আসর শুরু করা পাকিস্তানের অবশ্য খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী হওয়ার সুযোগ নেই। নেপাল ম্যাচ শেষে বাবর যেমন বলেছিলেন, ‘নেপালের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল প্রস্তুতির ভালো সুযোগ । ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হতে চাই না। ভারতের বিপক্ষে জয় পাওয়া সহজ হবে না। কারণ, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে কী হবে তা আগে থেকে বোঝা যায় না। আমরা সতর্ক থাকতে চাই।’

আসলেই তা-ই। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে আগে থেকে বলার উপায় নেই। ভারতের সাবেক কোচ রবি শাস্ত্রী যেমন দুই দলের দ্বৈরথ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ভারতকে ফেভারিট বললেও পাকিস্তানকেও পিছিয়ে রাখছে না। ইএসপিএনক্রিকইনফোকে শাস্ত্রী বলেন, ‘আমি ভারতকেই ফেভারিট বলব। ২০১১ সালের পর থেকে এটিই তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী দল। এই খেলোয়াড়েরা এবং একজন অধিনায়ক, যে পোড় খাওয়া, যে এই ক্ষেত্রটা অনেকের চেয়েই ভালো বোঝে। এটাও বলতে হবে, পাকিস্তান ব্যবধান কমিয়ে এনেছে। সাত-আট বছর আগে দুই দলের শক্তিমত্তা, খেলোয়াড়দের মধ্যে একটা ব্যবধান ছিল। তবে পাকিস্তান সেটি কমিয়ে এনেছে। তারা খুবই ভালো দল। তাদের হারাতে হলে সেরাটা দিতে হবে।’

শাস্ত্রী অবশ্য এ-ও বলে দিয়েছেন, এ ম্যাচে ফর্মের চেয়ে টেম্পারমেন্ট হবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটে-বলের লড়াইয়ের সঙ্গে যেখানে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইটাও হয়ে উঠতে পারে গুরুত্বপূর্ণ।

তবে এ ম্যাচের উত্তেজনায় জল ঢালতে পারে বৃষ্টি। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সেই শঙ্কা আছে যথেষ্টই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *