পাকিস্তানের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, সামরিক বাহিনীর সমর্থন ছাড়া তিনি সরকার চালাতে পারেন না। কারাবন্দি হওয়ার আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এই সরকার হাইব্রিড বলে সমালোচনা করে আসছিলেন। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এমন মন্তব্য করেন। তিনি জানান, আগামী মাসেই দেশে ফিরছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার বড় ভাই নওয়াজ শরিফ। এদিকে বৃহস্পতিবার কারাবন্দি ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন তার স্ত্রী বুশরা বিবি।
জিও নিউজের উপস্থাপক হামিদ মীর বলেন, পাকিস্তানে বিশ্বের সবচেয়ে হাইব্রিড শাসন পরিচালিত হয় বলে আলোচনা আছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ইমরান খান তার শাসনামলে ব্যাপকভাবে তত্কালীন সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। ইমরান সামরিক বাহিনীর সমর্থনও পেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইমরান খান অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেও নিজে তাদের সমর্থন পেয়েছেন। শাহবাজ শরিফ বলেন, প্রত্যেক সরকারেরই গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর বিশেষ করে সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে সমর্থন পেতে হয়। পাকিস্তানের কূটনৈতিক বার্তা সাইফার ফাঁস হওয়ার ঘটনা সত্যি হলে তা বড় ধরনের অপরাধ বলে উল্লেখ করেন শাহবাজ।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদনে ইমরান খানের অভিযোগই সত্যি প্রমাণিত হলো—সেই বিষয়ে শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে দুই বার জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছি। একটিতে যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং পররাষ্ট্র সচিব আসাদ মজিদ জানিয়েছে, ডোনাল্ড লুর সঙ্গে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে কোনো আলোচনা তার হয়নি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া এবং সিনিয়র সেনা কর্মকর্তারাও কোনো ষড়যন্ত্র হয়নি বলে জানিয়েছেন।
শাহবাজ শরিফ জানান, পাকিস্তান মুসলিম লীগের (এন) চেয়ারম্যান নওয়াজ শরিফ আগামী মাসে দেশে ফিরবেন। যদিও তিনি নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করেননি। খুব দ্রুত দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জানান, তিনি শিগিগরই লন্ডনে যাবেন এবং এ বিষয়ে তার বড় ভাই নওয়াজ শরিফের সঙ্গে আলোচনা করবেন। নওয়াজ শরিফের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনো বাধা সৃষ্টি করবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে শাহবাজ বলেন, নওয়াজ শরিফ আইনিভাবে মোকাবিলা করবেন। আগামী নির্বাচনে জিতলে তিনিই চতুর্থবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন।
এদিকে নওয়াজ শরিফকে রাজনীতিতে ফেরাতে ‘রিভিও অব জাজমেন্টস অ্যান্ড অর্ডারস’ নামে শাহবাজ সরকারের আনা একটি আইন সুপ্রিম কোর্টে বাতিল হয়ে গেছে। গতকাল আইনটিকে ‘অসাংবিধানিক’ অভিহিত করে তা বাতিল করে দেয় দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। এর মধ্যদিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএল-এন) নেতা নওয়াজ শরিফের রাজনীতিতে ফেরার পথ বন্ধ হয়ে গেল। ফিরতে পারছেন না সাবেক পিটিআই নেতা ও সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর তারিনও। যদিও নওয়াজ শরিফের আইনজীবী জানিয়েছেন, রাজনীতি করতে পারবেন নওয়াজ শরিফ। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় তার রাজনীতি করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।