প্রমত্তা যমুনা নদীতে নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনের পর থেকে গত ২৬ বছরে সাত হাজার ৮৭৯ কোটি ২৯ লাখ ৭১ হাজার ৫০০ টাকা টোল আদায় হয়েছে। ১৯৯৮ সালের জুন মাস থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত যানবাহন পারাপার থেকে এ টোল আদায় করা হয়। টোল আদায়ের পরিমাণ সেতু নির্মাণে বিনিয়োগের প্রায় দ্বিগুণ। বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
১৯৯৮ সালের ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর উদ্বোধন করেন। এর নির্মাণ ব্যয় হয়েছিল তিন হাজার ৭৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সেতু নির্মাণকালে ২৫ বছরে বিনিয়োগের টাকা তুলে আনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ের সাত বছর আগেই এর নির্মাণ ব্যয় উঠে আসে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের সড়কপথে যোগাযোগের জন্য ১৯৯৪ সালে যমুনা নদীর ওপর এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতুটি যমুনা নদীর পূর্ব তীরে টাঙ্গাইলের কালিহাতী ও ভূঞাপুর উপজেলা এবং পশ্চিম তীরে সিরাজগঞ্জ জেলাকে সংযুক্ত করেছে। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন উদ্বোধনের পর যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর এবারের ঈদুল আজহায় ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ যানবাহন পারাপার হয়েছে। গত ২৭ জুন রাত ১২টা থেকে ২৮ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ৫৫ হাজার ৪৮৮টি গাড়ি সেতু পারাপারের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিন কোটি ৫৮ লাখ ৪০ হাজার ২০০ টাকা টোল আদায় হয়। এর আগে বিগত ২০২১ সালের ১৩ মে ২৪ ঘণ্টায় ৫২ হাজার ৭৫৩টি যানবাহন পারাপারের বিপরীতে টোল আদায় হয় দুই কোটি ৯৯ লাখ ১৮ হাজার ২৪০ টাকা।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বাসেক) বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল জানান, বিগত ১৯৯৮ সালের জুন মাসে ৯৮ লাখ টাকা টোল আদায় হয়। ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে ৬১ কোটি ২৭ লাখ, ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে ৬৬ কোটি ৯৪ লাখ, ২০০০-০১ অর্থবছরে ৮২ কোটি ৮৪ লাখ, ২০০১-০২ অর্থবছরে ৯৩ কোটি ৫৮ লাখ, ২০০২-০৩ অর্থবছরে ১০৮ কোটি ৭২ লাখ, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ১৩১ কোটি ৮ লাখ, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ১৫২ কোটি, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ১৯৭ কোটি ৯৭ লাখ, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ১৭৩ কোটি ৭৬ লাখ, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ২০১ কোটি ৯৬ লাখ, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২১৪ কোটি ৪২ লাখ, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ২৪২ কোটি ৯৯ লাখ, ২০১০-১১ অর্থবছরে ২৬৭ কোটি ১০ লাখ, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩০৬ কোটি ২৩ লাখ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩২৭ কোটি ৯৮ লাখ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩২৫ কোটি ৩৮ লাখ, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩৫১ কোটি ১৪ লাখ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪০৪ কোটি ৮৮ লাখ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৮৬ কোটি ৫২ লাখ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫৪৩ কোটি ৮০ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৭৫ কোটি ৩৪ লাখ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫৬০ কোটি ২৮ লাখ, ২০-২১ অর্থবছরে ৬৫৪ কোটি ৮২ লাখ, ২১-২২ অর্থবছরে ৭০৪ কোটি ৫৫ লাখ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৮০ কোটি ৭৫ লাখ ৭১ হাজার ৫০০ টাকা টোল আদায় করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল আরও জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু-টাঙ্গাইল ও ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের ২৩টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ হাজার যানবাহন সেতু দিয়ে পারাপার হয়। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের ছুটিতে পরিবহণের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।