তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় রজব তায়্যিব এরদোয়ানকে অভিন্দন জানিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বনেতারা। তুরস্কের সমৃদ্ধি কামনার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের ইঙ্গিত দিচ্ছেন তারা। এরইমধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, আজারবাইজানি প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসাইন, কুয়েতি আমির শেখ সাবাহ আল আহমদ আল জাবের আল সাবাহ, মেসিডোনিয়ান প্রেসিডেন্ট জর্জ ইভানোভ, সার্বিয়ান প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার ভুসিক, উজবেক প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োয়েভ, সুদানি প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির, ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাস, বসনিয়ান নেতা বাকির ইজেতবেগোভিচ ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানিসহ বিশ্ব নেতাদের অনেকে এরদোয়ানকে অভিনন্দিত করেছেন।
বিশ্বনেতাদের মধ্যে সর্বপ্রথম টেলিফোনে এরদোয়ানকে শুভেচ্ছা জানান, আজারবাইজানি প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। তুরস্কের উন্নতি, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সফলতা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির দৃঢ় অবস্থানের জন্য প্রশংসা করেন তিনি। বলেন এরদোয়ানের হাত ধরে তুরস্ক এগিয়ে গেছে। তুর্কি প্রেসিডেন্টকে আজারবাইজান সফরের জন্যও আমন্ত্রণ জানান আলিয়েভ। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের বিবৃতি সূত্রে জানা গেছে, আলিয়েভের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন এরদোয়ান।
ইউরোপীয় দেশের নেতা হিসেবে প্রথম এরদোয়ানকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান।
সোমবার (২৫ জুন) এরদোয়ানকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক লিখিত বিবৃতিতে রুহানি বলেন: ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আপনার জয় এবং নতুন করে আস্থা ফিরে পাওয়ায় আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।’ এক শুভেচ্ছাবার্তায় তিনি বলেন, এরদোয়ানের নতুন মেয়াদে ইরান ও তুরস্কের বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী হবে। মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে দুই দেশের ঘনিষ্ঠ ও দায়িত্বপূর্ণ সহযোগিতা বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের এবং শান্তি, কল্যাণ ও স্থিতিশীলতা জোরদারের আরও উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করবে। একইসঙ্গে তিনি তুরস্কের জনগণের সাফল্য ও কল্যাণ কামনা করেন।
সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও এরদোয়ানকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তুরস্কের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে এবং যৌথভাবে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কাজগুলো করতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানান তিনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো আলাদা করে এরদোয়ানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে এবং সব ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে ইউক্রেন বদ্ধপরিকর। টুইটারে পোরোশেঙ্কো লিখেছেন: ‘তুর্কি প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় রজব তায়্যিব এরদোয়ানকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি নিশ্চিত, জনগণের বিশ্বাস ও নতুন সাংবিধানিক ক্ষমতা তুরস্কের আরও উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণের জন্য পথ খুলে দেবে।’এরদোয়ানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট নুর সুলতান নাজারবায়েভ একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়: নির্বাচনের ফলাফলের মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনার প্রচেষ্টাকে তুর্কি জনগণ মুল্যায়িত করে। আপনি যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার এনেছেন এবং কৌশলগত উন্নয়ন সাধন করেছেন সেগুলোকে তারা সমর্থন করে।অভিনন্দিত করতে এরদোয়ানকে ফোন করেছিলেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি বলেন, ‘তুরস্কের আরও সফলতা, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা কামনা করছি।’ এরদোয়ানকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেছেন, তুর্কি গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি তুরস্কের সাফল্য কামনা করছি।’ এরদোয়ান তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে তুরস্ক সবসময় ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে থাকবে। তাদের স্বাধীনতা ও স্থিতিশীলতার প্রতি সম্মান জানাবে।
পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসেনও অভিনন্দন জানিয়েছেন এরদোয়ানকে। তিনি বলেন, ‘তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের প্রতি প্রাণঢালা অভিনন্দন।’ বিশালসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতিকে উল্লেখ করে বলেন, এটা তুরস্কের গণতন্ত্রের স্বাক্ষর রাখে। তিনি আশা করেন, এরদোয়ানের নেতৃত্বে তুরস্ক তার উন্নতি ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখবে। ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়েহ রবিবার সন্ধ্যায় এরদোয়ানকে টেলিফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আঙ্কারার সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে তিনি জানান, সামনের দিনগুলোতে তুরস্কে তিনি একটি প্রতিনিিধ দল পাঠাবেন।
মিসরে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডও এরদোয়ানকে অভিনন্দন জানিয়েছে। সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ইব্রাহিম মুনির ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আল্লাহ আপনাকে, গোটা ইসলামি বিশ্বকে এবং মানবতাকে হেফাজত করুন।’
মধ্যপ্রাচ্য থেকেও অভিনন্দন জানাচ্ছেন নেতারা। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন কুয়েতি আমির শেখ সাবাদ আল আহমাদ আল-জাবের আল-সাবাহ। দেশটির বার্তা সংস্থা কুনা জানায়, এরদোয়ানের প্রশংসা করে কুয়েতি আমির বলেন, সামনের দিনগুলোতে কুয়েত-তুরস্কের সম্পর্ক আরও সুসংহত হবে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় এরদোয়ানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন মালয়েশিয়ার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম। এরদোয়ানের বিজয়কে ‘ইসলামি বিশ্বের বিজয়’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। আনোয়ার ইব্রাহিম মনে করেন, আনোয়ারের নেতৃত্বে তুরস্ক আরও সমৃদ্ধ হবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করবে।
এছাড়া গ্রিস, সার্বিয়া, সুদান, উজবেকিস্তান ও মেসিডোনিয়ার পক্ষ থেকেও অভিনন্দন জানান দেশগুলোর নেতারা।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এরদোয়ান। ২০১৪ সালেই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন। তার প্রধান সমর্থক হচ্ছেন রক্ষণশীল এবং ধার্মিক অপেক্ষাকৃত বয়স্ক তুর্কিরা। ২০১৬ সালের এক ‘ব্যর্থ গণঅভ্যুত্থানের’ পর ২০১৭ সালে এক গণভোটে সামান্য ব্যবধানে জয়লাভ করেন এরদোয়ান। এতে তিনি দেশটিকে সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে প্রেসিডেন্ট শাসিত ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে জনরায় পান। রবিবারের নির্বাচনেও জয় পান এরদোয়ান। এর মধ্য দিয়ে নির্বাহী ক্ষমতা পাচ্ছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এরদোয়ান সরকারি কর্মকর্তা, ভাইস প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রীদের নিয়োগ দেবেন এবং যেকোনো সময় সংসদ ভেঙে দিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারবেন। সংশোধিত সংবিধানে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত করার ক্ষমতা অর্জন করেছেন তিনি।