বিজিবি এখন ত্রিমাত্রিক বাহিনী : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিজিবি এখন ত্রিমাত্রিক বাহিনী : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে বিজিবি এখন ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে উন্নীত হয়েছে।’

আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে ৯৯তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সেখানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) এর বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে এই কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।

সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ দেন।

ভাষণের শুরুতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একইসাথে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবি’র ২ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম এবং ৭৭ জন বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত বীরসহ ৮১৭ জন অকুতোভয় বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশপথে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্টেরর অংশ হিসেবে অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্ট স্থাপন, অত্যাধুনিক যুগোপযোগী ও কার্যকর অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন্স, এটিভি, এপিসি, রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল এবং এয়ার বোটসহ দ্রুতগামী জলযান সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া বিজিবি’র প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডের কলেবর বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) এর পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আরও একটি আধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সংবলিত ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, কিংবদন্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই বাহিনী তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী দিকনির্দেশনায় আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা, সীমান্ত ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি সীমান্তে চোরাচালান ও মাদক পাচাররোধ, নারী ও শিশু পাচারসহ যেকোনও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করে সবার আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিকের মূল পরিচিতি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনও পিছপা হয় না সে-ই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি। নবীন সৈনিকরা এসব গুণাবলীর প্রতিফলন ঘটিয়ে বাহিনীর ঐতিহ্য সমুন্নত রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বিজিবি’র চারটি মূলনীতি-‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’-এ উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে বিজিবি’র ওপর অর্পিত যেকোনও দায়িত্ব সুশৃঙ্খলভাবে পালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিজিবি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *