বাংলাদেশে ব্যবসায়ের সুযোগ অন্বেষণ করে বিনিয়োগ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মার্কিন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, ফার্মাসিউটিক্যালসে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
শুধুমাত্র মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ রাখার প্রস্তাবও পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী।মঙ্গলবার (২ মে) ইউএস চেম্বার অব কমার্স ওয়াশিংটন ডিসির গ্রেট হলে ‘ইউএস-বাংলাদেশ ইকোনমিক পার্টনারশিপ: শেয়ার্ড ভিশন ফর স্মার্ট গ্রোথ’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের এক্সিকিউটিভ বিজনেস গোলটেবিল বৈঠক হয়। বৈঠকে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমি আপনাদেরকে আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, হালকা ও ভারী যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক সার, আইসিটি, সামুদ্রিক সম্পদ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামসহ অনেক গতিশীল ও সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল আমাদের দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের যাত্রায় অংশীদার হিসেবে আমাদের সাথে থাকার জন্য আমি আজকে এখানে আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৯টি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করছে।
প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলে বাংলাদেশের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ নীতির কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে আইন দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষা, ট্যাক্স হলিডে, রয়্যালটি রেমিটেন্স, বাধাহীন প্রস্থান নীতি, লভ্যাংশ ও মূলধন সম্পূর্ণ প্রত্যাবর্তন সুবিধা রয়েছে।
তিনি আশ্বাস ব্যক্ত করে বলেন যে, আমরা আমাদের বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ জলবায়ু উন্নয়ন কর্মসূচি’ বাস্তবায়ন করছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে আমাদের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য, বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের বৃহত্তম উৎস, দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন অংশীদার এবং প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
তিনি বলেন, আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য হলো আমাদের জনগণের জন্য পারস্পরিক সুবিধা ও সমৃদ্ধি অর্জন করা। আমাদের ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের মধ্যে সম্পর্কের তা প্রতিফলিত হচ্ছে। ২০২১-২০২২ সালে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০.৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং ২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।
উপকূলীয় অঞ্চলে বাংলাদেশে একটি শিল্প কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাপানের প্রস্তাবের উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাই আমাদের লক্ষ্য এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নীত করা। সরকারের প্রচেষ্টায় গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন সর্বজনীনভাবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে স্বীকৃত।
তিনি বলেন, সুশাসনের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও স্থিতিশীলতা, গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং আইসিটি খাতে অগ্রগতির কারণে এটা সম্ভব হয়েছে যা আমাদেরকে ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এই রূপকল্প ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উচ্চ আয়ের উন্নত দেশে পরিণত করবে।