নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে মাদক কারবারিদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রোববার গভীর রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত থেমে থেমে এ সংঘর্ষ চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে সোমবার সকালে অভিযান চালায় পুলিশ।
সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান চলে।
পুলিশ জানায়, এ সময় অন্তত ১৩ জনকে আটক, মাদক ও দেশীয় ধারাল অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। তবে আটককৃতদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমার নেতৃত্বে এ অভিযানে দুই শতাধিক ডিবি ও পুলিশ সদস্য অংশ নেয় বলে জানান জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (‘গ’ সার্কেল) আবির হোসেন।চনপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রোববার সন্ধ্যায় চনপাড়ার চিহ্নিত মাদক কারবারি রায়হান ও তার লোকজন অপর মাদক কারবারি জয়নাল আবেদীনের সহযোগী মারুফকে মাদক সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মারধর করেন। এই ঘটনার পর রায়হানের পক্ষ নিয়ে মাদক কারবারি শমসের আলী ও মো: শাহাবউদ্দিন এবং মারুফের পক্ষ নিয়ে জয়নাল আবেদীনের লোকজন দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় গুলি বিনিময় চলে বলেও স্থানীয়রা জানান।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গভীর রাত পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। এই সময় উভয়পক্ষের লোকজন তাদের প্রতিপক্ষের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট চালায়।প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সংঘর্ষের সময় সাত নম্বর ওয়ার্ডের নতুন রাস্তায় অবস্থিত তার দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আরো কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
চনপাড়ার স্থানীয় মানুষ জানায়, একসময় পুরো চনপাড়া নিয়ন্ত্রণ করতেন সাবেক ইউপি সদস্য বজলুর রহমান। তার মৃত্যুর পর তারই সহযোগীরা চনপাড়ায় আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে একে-অপরের সাথে সংঘর্ষে জড়ায়।হত্যা, মাদক, ডাকাতিসহ অন্তত ২৬ মামলার আসামি বজলুর রহমান বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর পর আলোচনায় এলে ব়্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। গত ৩১ মার্চ কারা তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বজলুরের মৃত্যুর পর চনপাড়া এলাকায় মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় বলে স্থানীয়রা বলছেন।
মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শেষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা জানান, গতরাত (রোববার) মাদক চোরাকারবারিদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। সকালে ডিবি ও পুলিশের সমন্বয়ে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়।
‘অভিযানে বেশ কয়েকটি চিহ্নিত মাদকস্পট ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ স্পটগুলো নিয়ন্ত্রণ করে জয়নাল, শমসের, শাহাবউদ্দিন, রায়হান, ইয়াসমিন, নাজমা, রহিমা, শাওন, শাহ্ আলম নামে চিহ্নিত কয়েকজন মাদক কারবারি। চিহ্নিত এ মাদক কারবারিরা পলাতক তবে তাদের সহযোগী ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন গতরাতের সংঘর্ষের ঘটনাতেও জড়িত। অন্যরাও মাদক কারবার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। অভিযানে মাদক ও চায়নিজ কুড়াল, রাম দা, টেঁটা, সুইচযুক্ত চাকুসহ বেশকিছু দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে,’ বলে জানান তিনি।