সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে ব্যালটে ভোটগ্রহন ও সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েন করার দাবি জানিয়েছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১ টায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবির কথা তুলে ধরেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, বিগত নির্বাচন গুলোতে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না হওয়ায় সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়নি এবং ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি।
যার কারনে বিএনপিসহ অনেক দল নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে আমরা এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছি। তাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে বেশ কিছু দাবি ও প্রস্তাব পেশ করেন তিনি। ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে) এ নির্বাচন নয়, নির্বাচন চান ব্যালট পেপারে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও যথাযথ ক্ষমতা প্রদান করে নির্বাচনের দিন নিরপেক্ষ নির্বাচন গ্রহনের পরিবেশ সৃষ্টি করার পাশাপাশি ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান। এসময় তাপস ইভিএম সম্পর্কে বলেন, ইভিএম এর অংশ মূলত দুইটি। একটি হার্ডওয়্যার। এতে রয়েছে মাদার বোর্ড, মাইক্রোপ্রসেসর ও ভোট গ্রহণেরজন্য সংযোজিত অন্যান্য যন্ত্রপাতি। দ্বিতীয় অংশ সফটওয়্যার।
এতে রয়েছে অপারেটিং সিস্টেম, ডিভাইস ড্রাইভার, বিভিন্ন ফাইল ও কম্পিউটার এপ্লিকেশন। যেহেতু ইভিএমে ব্যবহৃত সফটওয়্যারের উপর নির্বাচনের ফলাফল নির্ভর করে, তাই এই অংশের নিয়ন্ত্রণ যার হাতে থাকবে তার পক্ষে নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করা অত্যন্ত সহজ বলে আমি মনে করি।ইভিএমের সঙ্গে সংযোজিত যেকোনো ইনপুট পোর্টের মাধ্যমে যন্ত্রটির ভেতর ম্যালওয়্যার (ম্যালওয়্যার-মলিকুলাস কোড) প্রবেশ করিয়ে ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করা সম্ভব। জনগন ইভিএম ব্যবহারে অভ্যস্থ না থাকার কারনে ভোট প্রদানে ধীরগতি, দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থেকে বয়স্ক সহ অনেক ভোটারাই ভোট না দিয়ে ফিরে যায়। প্রযুক্তিগতভাবে ইভিএম একটি দুর্বল যন্ত্র। এতে ‘ভোটার ভেরিফাইড পেপার অডিট ট্রেইল’ (ভিভিপিএটি) নেই, যার ফলে কমিশন ভোটের যে ফলাফল ঘোষণা করবে তা-ই চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং এটি স্বচ্ছ ভাবে পুনঃগণনা বা নিরীক্ষা করার সুযোগ থাকে না।
প্রযুক্তির কারণে ইভিএম ব্যবহার করে ডিজিটাল জালিয়াতিও করা যায়। বায়োমেট্রিক্স ভিত্তিক ইভিএম অনেক ভোটারকেই শনাক্ত করতে পারে না, ফলে কমিশন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদেরকে তাদের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে যন্ত্রটি খুলে দেয়া তথা ইভিএমকে ওভাররাইড করার ক্ষমতা দিয়ে থাকে। যে কোনো ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের মতো প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে ইভিএমের ফলাফল নিয়েও কারসাজি করা যায়।
এছাড়া নির্বাচনের সময়ে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কারিগরি টিমও নির্বাচনী ফলাফল বদলে দিতে পারেন। গত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অন্তত দুইবার ফলাফল প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে, যা কেবল ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে যে, ইভিএম ব্যবহার করার কারণে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এই বাস্তব কারনে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় ভাবে ইভিএম-এ ভোট গ্রহন না করার আহব্বান জানিয়ে আসছে।বাংলাদেশের মতো দেশে কাগজের ব্যালটে প্রচলিত পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করাই সর্বোত্তম। তাই আমাদের দাবী ব্যালট পেপারেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে, যাতে ভোটাররা ভোট দিতে অভ্যস্ত। মেয়র প্রার্থী বলেন, আমরা দেখে এসেছি দেশের মানুষের সেনাবাহিনীর প্রতি গভীর আস্থা। তাই, ভোটারদের ভীতি দূর করতে, ভোট কেন্দ্র দখল, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং সকল প্রকার অরাজক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন অত্যন্ত জরুরি এবং সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টি বরিশাল মহানগরের আহবায়ক মহসিন উল ইসলাম হাবুল, মহানগর সহ-সভাপতি আক্তার হোসেন সপ্রু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান চৌধুরীসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।