ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানীতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা

ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানীতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা

বাংলাদেশ
ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকার বড় দুটি মার্কেট ও দেশের অন্যান্য স্থানে আগুনের ঘটনায় এবার বাড়তি নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে শপিং মল ও মার্কেটে।

ঈদকে কেন্দ্র করে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি নিউ সুপার মার্কেটে আগুনের পর শপিং মল ও মার্কেটকেন্দ্রিক গোয়েন্দা নজরদারি এরই মধ্যে বাড়ানো হয়েছে।

রাজধানীসহ সারা দেশে ঈদকে উৎসবমুখর রাখতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হলেও নাশকতার কোনো হুমকি নেই বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিশেষায়িত বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে থানা পুলিশের চেকপোস্ট, তল্লাশি, গাড়িতে ও হেঁটে পেট্রোলিং থাকবে। গুজব, মিথ্যা তথ্যের অপপ্রচার ঠেকাতে পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সাইবার পেট্রোলিং অব্যাহত থাকবে।

রাজধানীকে নিরাপদ রাখতে থানা পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও মাঠে থাকবে। ঈদকেন্দ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে র‌্যাবের পক্ষ থেকে দেশের প্রতিটি ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব সদরদপ্তর।

চলতি মাসে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বঙ্গবাজার ও নিউ মার্কেটে বড় দুটি অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিঃস্ব হয়েছেন হাজারো ব্যবসায়ী। দুটি আগুনের ঘটনাই ভোররাতে হয়েছে। কেউ আগুন লাগিয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই অভিযোগটি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এ কারণে এবারের ঈদে মার্কেটকেন্দ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, নিউ মার্কেটে আগুনের পর রাজধানীর মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছে পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তরের সংশ্লিষ্টরা। এসব বৈঠকে মার্কেটগুলোর নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি ওঠে এসেছে।

ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা নিরাপত্তা প্রহরী বাড়িয়েছেন এবং আগুনের মতো দুর্ঘটনা সামাল দিতে পূর্বপ্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি গোয়েন্দারাও বিপণি বিতানগুলোতে নজরদারি বাড়িয়েছেন।ঈদ নিরাপত্তা নিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘প্রতি বছরই ঈদ বা বড় উৎসবকে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। অভিজ্ঞতার আলোকে কোনো একটি বিষয়কে অ্যাড্রেস করার প্রয়োজন মনে হলে বা গোয়েন্দা তথ্য থাকলে সে বিষয়টা যোগ হয়।’

তিনি বলেন, ‘এবার ঈদকে ঘিরে হুমকির কোনো তথ্য নেই, তবে নিউ মার্কেটে আগুনের পর আমরা মনোযোগ দিয়েছি। আমরা প্রতিটা মার্কেটে দোকান মালিক সমিতি ও বড় বড় মার্কেটের সংশ্লিষ্টদের সিকিউরিটি নিয়ে ব্রিফ করেছি। আমাদের গোয়েন্দারা তৎপর রয়েছে। কেউ নাশকতার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করার প্রস্তুতি রয়েছে।’

সরকারি ছুটি দুই দিন আগে থেকে শুরু হওয়ায় একটু আগে আগেই ঢাকা ছাড়ছে নগরবাসী। বুধবার থেকে ক্রমেই ফাঁকা হচ্ছে রাজধানী। শহর ফাঁকা হলে বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে রাস্তায় চুরি, ছিনতাই বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। সেই আশঙ্কা থেকে পাড়া-মহল্লার সিকিউরিটি গার্ডদের তৎপর থাকতে থানা পুলিশের মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ডিএমপি থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিটি থানা এলাকায় অলিগলি ও মূল সড়কে পুলিশ গাড়ি দিয়ে ও হেঁটে পেট্রোলিং করবে। বিভিন্ন পয়েন্টে থাকবে চেকপোস্ট, সন্দেহভাজনদের করা হবে তল্লাশি।ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করে নেয়া হচ্ছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাজধানীর ঈদগাহগুলোতে জামাত শুরুর আগেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে ডিএমপি ও র‌্যাব।দেশের সবগুলো ব্যাটালিয়ন নিজ নিজ এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ‘ঘরমুখো মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। স্টেশনগুলোতে আমরা অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছি। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে র‌্যাবের ব্যাটালিয়নগুলো নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ পর্যাপ্তসংখ্যক র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য চেকপোস্ট বসিয়ে এবং সিসিটিভি মনিটরিং করা হবে। এ ছাড়া যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড ও র‌্যাবের হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা আছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *