পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর প্রথমবার প্রকাশ্যে কথা বলেছেন। নতুনভাবে নির্বাচনের দাবি তুলে পাকিস্তানে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ এর আগে লং মার্চের ডাক দিয়ে মাঠে নেমে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
বিবিসি জানিয়েছে, গত ২৯ অক্টোবর লাহোর থেকে শুরু হয় এই কর্মসূচি। রাজধানী ইসলামাবাদের পথে চার দিন পর বৃহস্পতিবার পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে সমাবেশের জন্য তৈরি হলে সেখানে হয় গুলিবর্ষণ। সেখানে গুলিবিদ্ধ হন ইমরান খান।
লাহোরের একটি হাসপাতালে হুইল চেয়ারে বসে ইমরান খান বলেছেন, তিনি গুলি থেকে বাঁচতে পারতেন না; যে দুই শুটারকে তিনি দেখেছেন, তারা যদি একযোগে আক্রমণ চালাতো।
ইমরান খান আরো বলেছেন, কারণ- আমি পড়ে গেলাম, আর শুটারদের একজন ধারণা করল আমি মারা গেছি এবং (সে) চলে গেল।
এরই মধ্যে পাকিস্তানের পুলিশ একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ওই ভিডিওতে এক ব্যক্তি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, সাবেক ক্রিকেটার জনগণকে ‘বিপথগামী’ করছিলেন। এজন্য তিনি ‘ইমরান খানকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন’। তবে ওই ব্যক্তি ঠিক কোন পরিস্থিতিতে এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তা পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি।
এদিকে ইমরান খানকে গুলির ঘটনার প্রতিবাদে তার দল পিটিআইয়ের ডাক দেওয়া বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল শুক্রবার পাকিস্তানজুড়ে ব্যাপক সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।
দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বড় বড় শহরে ইমরানের সমর্থকরা রাস্তা আটকে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। কোথাও কোথাও পিটিআইয়ের কর্মীরা পুলিশের দিকে ইট-পাথর ছুড়লে পাল্টা পুলিশ তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে; অনেক এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়াধাওয়ির ঘটনাও ঘটেছে।
কোয়েটায় মনন চকে পিটিআইয়ের বিক্ষোভে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের সাবেক ডেপুটি স্পিকার কাশিম সুরি নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখানে বিক্ষোভকারীরা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। ইমরানের বিরুদ্ধে হামলার প্রতিবাদে গতকাল বেলুচিস্তানজুড়ে ধর্মঘট পালিত হয়েছে। কিলা আব্দুল্লা, নুশকি, পাশিন, সানজাউয়ি ও অন্যান্য জেলায় দোকানপাট, মার্কেট বন্ধ ছিল বলে সুরি জানিয়েছেন।
দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদেও পিটিআইয়ের কর্মী সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছেন। পেশোয়ার টোল প্লাজার কাছে বিক্ষোভে সরকারবিরোধী স্লোগান শোনা গেছে। করাচিতে ইমরানের সমর্থকরা রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। পরে তারা ইনসাফ হাউসের সামনে অবস্থান ধর্মঘটও করে। শেরা ফয়সাল এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাসও ছুড়তে হয়েছে। এর জন্য পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) নিয়ন্ত্রিত সিন্ধু সরকার ও বিলাওয়াল জারদারিকে দায়ী করেছে ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
লাহোরে পাঞ্জাব গভর্নর হাউসের বাইরে পিটিআইয়ের কর্মীরা টায়ার জ্বালিয়েছেন। অনেক বিক্ষোভকারী গভর্নর হাউসে ঢুকে পড়তে ও সিসিটিভি ভাঙতেও চেষ্টা করেন বলে টিভির ফুটেজে দেখা গেছে। ফয়জাবাদে টোল প্লাজার কাছে পিটিআইয়ের কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়তে শুরু করলে পরে পুলিশও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। ফয়সালাবাদে বিক্ষোভে পিটিআইয়ের নেতাকর্মীরা ইমরানের ওপর হামলার স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছেন। খাইবার পাখতুনখোয়ার শাংলা জেলায় রাস্তা দখল করে বিক্ষোভ হয়েছে; বিক্ষোভকারীরা আলপুরি, পুরান ও অন্যান্য এলাকা অবরুদ্ধ করে রেখেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে পিটিআই পাকিস্তানজুড়ে পুলিশ তাদের নেতাকর্মীদের ওপর সহিংসতা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান ২০১৮ সালে ভোটে জিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। দেশটির রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারী সেনাবাহিনীর সমর্থন তখন তার দিকে থাকলেও কিছুদিন পর তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।
সেনা সমর্থন হারানো ইমরানের বিরুদ্ধে এই বছরের শুরুতে জোট বেঁধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে দেশটির বড় দুই রাজনৈতিক দল। তাতে হেরে গত এপ্রিলে ইমরানের সরকারের পতন ঘটলে প্রধানমন্ত্রী হন মুসলিম লীগের শেহবাজ শরিফ, যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই।
এরপর গত মাসে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন জানায়, ইমরান খান পাবলিক অফিসে থাকার অযোগ্য। তবে এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিয়েছেন ইমরান খান।
সূত্র: বিবিসি