প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার গৃহীত মেগা-প্রকল্পগুলো দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। গত সাড়ে ১৩ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়নের সকল সূচকে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করেছে। ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’ উপলক্ষ্যে গতকাল শনিবার দেয়া এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সফলভাবে করোনা মহামারি মোকাবিলা করেছি। আমাদের মেগা-প্রকল্পগুলো দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশের নীচে নামিয়ে এনেছি। শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিচ্ছি। আমরা জঙ্গি-সন্ত্রাস ও দুর্নীতি নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছি।
তিনি আরো বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যেক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু করেছি। আমরা বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ প্রণয়ন করেছি এবং এর বাস্তবায়নও শুরু করেছি। ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’ বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন মেহেরপুর মহুকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে।
’৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদে সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ যথাক্রমে ১৬৭টি এবং ২৯৮টি আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সকল সংসদ সদস্য রেসকোর্স ময়দানে ৬-দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের শপথ গ্রহণ করেন। ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’- সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এসময় ‘আমার দেশ তোমার দেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ সেøাগান দেন। তিনি ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দীর্ঘ ২৩ বছরের শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রদান করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে শতাধিক দেশি-বিদেশি সাংবাদিকের উপস্থিতিতে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে। পাশাপাশি এদিন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদিত হয়। মেহেরপুর হয়ে উঠে অস্থায়ী সরকারের রাজধানী এবং সেদিন থেকে এ স্থানটি ‘মুজিবনগর’ নামে পরিচিতি লাভ করে। তিনি বলেন, মুজিবনগর সরকারের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার দু’ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান বিমান বাহিনী বোমাবর্ষণ ও আক্রমণ চালিয়ে মেহেরপুর দখল করে। ফলে, অস্থায়ী সরকার ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় এবং সেখান থেকে কার্যক্রম চালাতে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা মানুষের মৌলিক অধিকারসমূহকে প্রাধান্য দিয়ে মাত্র ৯ মাসেই একটি সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন। সাড়ে ৩ বছরের মাধ্যেই একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে স্বল্পোন্নত দেশে রূপান্তরিত করেছিলেন। দুর্ভাগ্য, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধীরা জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় ৪ নেতাকেও হত্যা করে। এরপর দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ছিলনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর, আমরা জাতির পিতা এবং জাতীয় ৪ নেতা হত্যার বিচার করেছি। পরবর্তিতে ২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠনের পর, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ প্রতিষ্ঠা করে মানবতাবিরোধী অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি।