কপালে টিপ পরা নিয়ে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার ও মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দারকে কটুক্তি এবং হেনস্তা করার ঘটনা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য নাজমুল তারেক। তবে ঘটনার বিস্তারিত এখনও জানাননি তিনি।
টানা দুই দিন সাঁড়াশি তদন্তের পর সেই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশক সদস্যকে শনাক্ত করে পুলিশ। এরই মধ্যে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছে এবং হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার।
প্রভাষক লতা সমাদ্দার গত শনিবার শের-ই-বাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সেখানে তিনি পুলিশের পোশাক পরা একজনের বিরুদ্ধে ‘ইভটিজিং’ এবং ‘প্রাণনাশের চেষ্টার’ অভিযোগ করেন।
এই খবর প্রকাশিত হলে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। হেনস্থাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রোববার (৩ এপ্রিল) সংসদে দাবি জানান সংসদ সদস্য ও অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। এরপর থেকে অভিযুক্ত পুলিশকে খুঁজছিল তেজগাঁও থানার পুলিশ।
অবশেষে দুই দিন তদন্তের পর শনাক্ত হন সেই পুলিশ সদস্য। তার নাম নাজমুল তারেক। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সুরক্ষা বিভাগের কনস্টেবল নাজমুল তারেক। ভুক্তভোগীর বর্ণনা ও ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাতে শনাক্ত করে তেজগাঁও বিভাগের একটি দল।
সোমবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে এই বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। তিনি বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত চলমান। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তদন্ত ও ঘটনার সত্যতা তুলে আনা হবে বলেও জানান তিনি।
বিপ্লব কুমার বলেন, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য নাজমুল প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন যে সেদিন লতা সমাদ্দারের সাথে তার কিছু একটা হয়েছিল। কিন্তু ঠিক কি হয়েছিল তা এখনও নিশ্চিত করে নি নাজমুল। পুলিশ বলছে, লতা সমাদ্দারের অভিযোগ গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে নাজমুলের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডিসি বিপ্লব বলেন, হেনস্তার অভিযোগে শিক্ষিকা লতা সমাদ্দার শুধু একজন পুলিশ সদস্যের কথা বলেছিলেন। অন্য কোনও পরিচয় নিশ্চিত করেননি।
তিনি বলেন, ডিএমপি কমিশনার, আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ঘটনার যথাযথ তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই মোতাবেক আমরা গুরুত্বের সঙ্গে অভিযোগ তদন্ত শুরু করি।
সিসিটিভি ফুটেজ, ডিজিটাল ও অ্যানালগ সব পর্যায়ে তদন্ত করে কনস্টেবল নাজমুলের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি। তার মোটরসাইকেল নম্বর ধরেও নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নাজমুল কনস্টেবল হিসেবে ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রটেকশন বিভাগে কর্মরত। শনাক্তের পরে তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
এক প্রশ্নের জবাবে বিপ্লব কুমার বলেন, ‘আমরা অভিযুক্ত কনস্টেবল নাজমুল তারেকের সঙ্গে কথা বলেছি। অভিযোগকারী নারীর সঙ্গে একটি ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন।’
এখন টিপ পরা বা ইভ টিজিং সংক্রান্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করব। আমাদের প্রাথমিক কাজ ছিল অভিযুক্তকে শনাক্ত করা।
যেহেতু জিডিতে অভিযুক্তের নাম, পদবি ও মোটরসাইকেলের নম্বর পরিপূর্ণ ছিল না। শুধু সংক্ষিপ্ত বিবরণী ছিল। তবে আমরা চেষ্টা করে পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি
তার বিষয়ে আইনানুগ পদক্ষেপ কী? জানতে চাইলে উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘সব জায়গায় ঘটনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সংসদেও আলোচনা হয়েছে। তবে আলোচনা হোক বা না হোক, আমরা প্রত্যেকটি অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করি। এ ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি।’
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের ব্যবহার করা মোটর সাইকেলটি চুরির কি না বা কিভাবে তার কাছে এলো তাও তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
শনিবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসা থেকে কলেজে যাওয়ার পথে উত্ত্যক্তের শিকার প্রভাষক ডক্টর লতা সমাদ্দার।
তিনি অভিযোগ করেন, কলেজে হেঁটে যাবার সময় পাশ থেকে মধ্যবয়সী, লম্বা দাঁড়িওয়ালা একজন ‘টিপ পরছোস কেন’ বলেই বাজে গালি দেন তাকে। ওই মধ্যবয়সী ব্যক্তির গায়ে পুলিশের পোশাক ছিল।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ঘটনার প্রতিবাদ জানালে এক পর্যায়ে তার পায়ের ওপর দিয়েই বাইক চালিয়ে চলে যান সেই ব্যক্তি। এতে তিনি আহত হন। পরে এ ঘটনায় শের-ই-বাংলানগর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।