কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায় উৎপাদন খরচের তুলনায় ফসল বিক্রি করে আশানুরূপ লাভ না পাওয়ায় কমেছে ধান চাষ। অপরদিকে ধানের বিকল্প হিসেবে কৃষকেরা ঝুঁকছেন ভুট্টা চাষে। এতে আগাম বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার আশংকা নেই। খরচও কম। দাম ভালো ও চাহিদা বেশি থাকায় ভুট্টা চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে তাদের।
এলাকার কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে লোকসানের কারণে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। ধান চাষ কমলেও বেড়েছে ভুট্টা ও সবজির চাষ। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্যায় হাওরাঞ্চলে ধান চাষে ঝুঁকিও রয়েছে। সেক্ষেত্রে ভুট্টা চাষে ঝুঁকি কম। কারণ, বর্ষা আসার আগেই কৃষক ভুট্টা ঘরে তুলতে পারেন। এক সময় উজানের উঁচু এলাকায় ভুট্টা চাষ করলেও বিকল্প ফসল হিসেবে এখন হাওরেও দিন দিন বাড়ছে ভুট্টার আবাদ।
কিশোরগঞ্জের হাওরবেষ্টিত নিকলী, মিঠামইন, বাজিতপুর ও অষ্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় এখন আগের চেয়ে ভুট্টার আবাদ বেশি হচ্ছে। চাহিদা থাকায় ভুট্টার দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকেরা। গত বছর যে ভুট্টার মণ ছিল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, সেই ভুট্টা এ বছর কৃষকেরা ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। সে জন্য যেসব জমিতে গত বছরও ধান আবাদ হতো, সেসব জমিতে মাঠের পর মাঠ দেখা যাচ্ছে এখন ভুট্টার খেত।
সরেজমিনে নিকলী সদর বাজারে দেখা যায়, স্থানীয় স্কুল ও কলেজ মাঠে নারী-পুরুষসহ পরিবারের ছোট–বড় সবাই ভুট্টা মাড়াই ও ভাঙানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নিকলী জি সি পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ভুট্টা শুকানো ও মেশিন দিয়ে ভাঙার কাজ করছেন নিকলী বড় পুকুরপাড়ের কৃষক আলিম উদ্দিন। তাকে এসব কাজে সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী মরিয়ম আক্তার ও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে নাবিলা আক্তার।
আলিম উদ্দিন জানান, ভুট্টা চাষে তিনি লাভবান। ১ হাজার ২০০ টাকা মণে তিনি এবার প্রায় ৪ লাখ টাকার ভুট্টা বিক্রি করতে পারবেন। তার খরচ হয়েছিল প্রায় দেড় লাখ টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নিকলীতে ২ হাজার ৩৮০ হেক্টর, মিঠামইনে ২ হাজার ১২০ হেক্টর, বাজিতপুরে ১ হাজার ৫৮০ হেক্টর, অষ্টগ্রামে ৫২০ হেক্টরসহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় এবার মোট ৮ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ছাইফুল আলম বলেন, আগে এ জেলায় ভুট্টা চাষ কম হলেও এবার জেলায় ৮ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। যে হাওরাঞ্চলে একসময় ভুট্টা খুব কম দেখা যেত, সেখানে এখন চারদিকে ভুট্টার দেখা মেলে।