বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দাবি করেছেন, ১৯৪৫ সালের পর থেকে রাশিয়া ইউরোপে সবচেয়ে বড় যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে।
বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বরিস এই মন্তব্য করেন বলে রবিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি।
এদিকে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানায়, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে শনিবার সকালে রুশ সমর্থিত বিদ্রোহীদের চালানো গুলিতে তাদের একজন সৈন্য মারা গেছে। অনেকদিন পর গোলাগুলিতে সরকারি সৈন্য নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটলো।
ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় এক লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন রেখেছে প্রতিবেশী রাশিয়া। এর মধ্যে ট্যাংক ও কামানসহ যুদ্ধবিমানের বহরও ইউক্রেন সীমান্তে পাঠিয়েছে দেশটি। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।
বিবিসির সোফি রাওর্থের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ‘১৯৪৫ সালের পর থেকে ইউরোপে সবচেয়ে বড় যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে রাশিয়া। এই যুদ্ধের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে বলেও সবদিক থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভকে ঘিরে ফেলতে একটি আক্রমণ শুরু করতে চায় রাশিয়া।’
নিরাপত্তা বিষয়ক একটি বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নিতে অন্য বিশ্বনেতাদের সাথে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এখন জার্মানির মিউনিখে অবস্থান করছেন। শনিবার সেখান থেকেই সংবাদমাধ্যমটির সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেন সীমান্তে বর্তমানে ১ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার রুশ সেনা অবস্থান করছে। রাশিয়া এবং বেলারুশ উভয় সীমান্তেই এসব সেনা অবস্থান করছে। এই পরিসংখ্যানের মধ্যে পূর্ব ইউরোপের রুশপন্থি বিদ্রোহীদের সংখ্যাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার রাশিয়া জানায়, সামরিক মহড়া শেষে ইউক্রেনে সীমান্ত থেকে ঘাঁটিতে ফিরতে শুরু করেছে রুশ সেনারা। কিন্তু পশ্চিমা দেশের কর্মকর্তারা বলছেন, মস্কোর এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা পাননি। বরং ইউক্রেন সীমান্তে সেনা সংখ্যা আরও বাড়িয়েছে মস্কো।
ইউক্রেনে যেকোনো সময় রুশ হামলার হুমকি এখনও রয়েছে কি না জানতে চাইলে বরিস জনসন বলেন, ‘যেসব প্রমাণ হাতে আসছে তাতে আমি ভীত। ইউক্রেনে হামলার হুমকি এখনও রয়েছে। বলা যায়, হামলার পরিকল্পনা কিছু ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে শুরুও হয়ে গেছে।’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে পরিকল্পনা দেখতে পাচ্ছি তাতে আমি ভীত যে, ১৯৪৫ সালের পর থেকে ইউরোপে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ শুরু হতে পারে। এই যুদ্ধে কেবল ইউক্রেনীয়দের প্রাণহানিই হবে না, এতে অনেক তরুন রুশ নাগরিকও প্রাণ হারাবে।’
এদিকে, ইউক্রেনে জাতিগত রুশ অধ্যুষিত ডনবাস অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিদ্রোহী নেতারা সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য তাদের যোদ্ধাদের পূর্ণমাত্রায় প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দনিয়েস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে যুদ্ধ করতে সমর্থ এমন সব পুরুষকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নারী, শিশু ও বয়স্কদের নিরাপদে সরানোর পরিকলপনা করা হয়েছ, এবং অনেকেই সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার রস্তভ-অন-ডন অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে।
প্রচুর শরণার্থী ঢুকতে পারে- এ সম্ভাবনায় রাশিয়া সীমান্তবর্তী ওই অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
সৈন্য নিহতের ঘটনায় ইউক্রেনের সেনাবাহিনী তাদের বিবৃতিতে বলেছে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছ থেকে এসব হামলা রাশিয়ার নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে। রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তাদের প্ররোচিত করার চেষ্টা করছে যাতে তারা পাল্টা গুলি চালায় এবং এতে বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলো বেশ কিছুদিন ধরে বলছে, জাতিগত রুশ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত ডনবাসে কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটলে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালানোর ব্যাপারে রাশিয়া সেটাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
তবে অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়া এত ব্যাপক সংখ্যক সৈন্য জড়ো করেছে যে ডনবাসে হামলা চালানোর কোনো সাহস ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর এখন নেই। সেটা করলে ইউক্রেনের জন্য তা আত্মঘাতী হবে।
গত রাতেও রাজধানী কিয়েভে ইউক্রেনের সরকার বলেছে যে তাদের সেরকম কোনো ইচ্ছা নেই।
এরকম পরিস্থিতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যে ইউক্রেনে হামলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন এবিষয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, আগামী যেকোন দিনে এই আগ্রাসন চালানো হতে পারে।
তবে ক্রেমলিন এখনও বলছে ইউক্রেনে হামলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।