বিশ্বে করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমতেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নিয়ম শিথিল হয়ে গিয়েছিলো। মাস্ক পরা বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাকেও অনেকে মানতো না। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট এসে তাদের আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে এই করোনা সংক্রমণ। নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সম্পর্কে এমনটাই বললেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
করোনা থেকে বাঁচতে মাস্ক পরা কতটা জরুরি, তার উপরও বিশেষ জোর এই বিজ্ঞানী। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম খোঁজ মেলা করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৫২৯-কে শুক্রবারই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে ওমিক্রন নাম দেওয়া হয়েছে। এটিকে উদ্বেগের কারণ হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট করোনার বাকি রূপগুলোর তুলনায় আরও বেশি সংক্রামক ও ক্ষতিকারক হতে পারে বলেও ধারণা গবেষক-বিজ্ঞানীদের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথনকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “যারা করোনাবিধি অনুসরণ করছিলেন না, এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট তাদের কাছে সচেতন হওয়ারই একটি বার্তা। মাস্ককে পকেটে থাকা টিকা বলা হয়। সংক্রমণ রুখতে মাস্কের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়লে তার সঙ্গে কীভাবে লড়াই করতে হবে, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রাপ্তবয়স্কদের সম্পূর্ণ টিকাকরণ, ভিড় যথাসম্ভব এড়ানো, জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের হার আরও বাড়ানো এবং করোনা সংক্রমণ হঠাৎ বৃদ্ধি পেলে, তার উপর কড়া নজরদারি। বিজ্ঞান ভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমেই আমরা ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে লড়তে পারি।”
তিনি আরও জানান, করোনার নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের থেকেও বেশি সংক্রামক হতে পারে। তবে এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়, বিজ্ঞানী ও গবেষকরা কাজ করছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।
ইতিমধ্যেই এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট হংকং, ইসরায়েল ও বেলজিয়ামেও ছড়িয়ে পড়েছে এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্টটির স্পাইক প্রোটিনে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৫০ বার অভিযোজন হয়েছে। এতবার অভিযোজন হওয়ায়, তা বাকি ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় আরও সংক্রামক ও প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে কিনা, বর্তমানে তা পরীক্ষা করে দেখছেন গবেষকরা।
এই বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী বলেন, “করোনার আগের রূপগুলোর সঙ্গে এই ভ্যারিয়েন্টের তুলনা করা উচিত নয়। নতুন ভ্যারিয়েন্টের চরিত্র বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন। আপাতত টিকাকরণের উপরই জোর দেওয়া উচিত। এছাড়াও জনস্বাস্থ্যবিধিগুলোও মেনে চলা প্রয়োজন।”
একাধিক দেশে ইতিমধ্যেই বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের ঝুঁকি নিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আগেও ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, কিন্তু তাতেও করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়া আটকানো যায়নি। ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা সাময়িক হওয়া উচিত এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।”