সাইবার ওয়ার্ল্ডে ভিকটিম হলে নিজেকে লুকাবেন না : আইজিপি

সাইবার ওয়ার্ল্ডে ভিকটিম হলে নিজেকে লুকাবেন না : আইজিপি

বাংলাদেশ
পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, টেকনোলজির এ যুগে দেশের ৪ কোটি ২৬ হাজার মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করছেন। ১৮ কোটি ২৫ লাখ মোবাইল সিম ব্যবহারকারী রয়েছেন। গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছেন। ফলে সাইবার জগতে ভিকটিম হওয়ার সম্ভাবনা বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি। সুতরাং কেউ ঝুঁকি না জেনে সোশ্যাল মিডিয়ার অপরিচিত জগতে ঝাঁপ দিবেন না।

গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সেলের প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ‘সাইবার স্পেস নারীসেবা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এক বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিল পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে কেক কেটে বর্ষপূর্তি পালন করা হয়।

এ সময় পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগসহ (সিআইডি) পুলিশের সব ইউনিটের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

আইজিপি বলেন, আমরা চাই না সাইবার জগতে কোনো নারী বা পুরুষ ভিকটিম হোক। দুর্ভাগ্যবশত যদি কেউ ভিকটিম হন, তাহলে দয়া করে কেউ লুকিয়ে রাখবেন না। আমরা সাইবার অপরাধীদের দমন করতে চাই। বেশিরভাগ নারী ভুক্তভোগী মামলা না করায় অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। সুতরাং মনে সাহস রেখে, আইনগত পদক্ষেপ নিন। আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। পুলিশ প্রধান বলেন, কিছুদিন আগে সারা দেশে ই-কমার্স ঝড় বয়ে গেল। দেড় লাখ টাকার মোটরসাইকেল কম টাকায় কেনার জন্য নিজেদের ব্যক্তিগত সব তথ্য ওই প্রতিষ্ঠানে দিয়ে দিলাম আমরা। এখন তাদের কাছে লাখ লাখ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য রয়ে গেছে। সেই তথ্যগুলোর নিরাপত্তা কি? সবার উচিত এগুলো ভেবে কাজ করা।

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সবাইকে সতর্ক হওয়ার বিকল্প নেই। কারণ কোনো কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। তখন এটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তিনি বলেন, যারা ভিকটিম হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই তরুণী। ফলে সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিষয় চিন্তা করে কেউ অভিযোগ দেন না। সামাজিক এই ট্যাবু ভাঙতে হবে। এ ছাড়াও অনেক সময় রাষ্ট্র নিজেই ভিকটিম হচ্ছে। নানারকম ভুয়া নিউজ, প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণে আমরা বদ্ধপরিকর।

হয়রানি শিকার মাত্র ১২ শতাংশ জিডি বা মামলা করেন:  পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাইবার  স্পেসে হয়রানির শিকার ১২ হাজার ৬৪১ জন ভুক্তভোগীর মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ জিডি বা মামলা করেছেন। এর মধ্যে মাত্র ১৩ শতাংশ ভুক্তভোগী অভিযুক্তের পরিচয় ও অবস্থান শনাক্তের আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৭ হাজার ২৮০ জন  সেবা প্রত্যাশী যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে হয়রানি-সংক্রান্ত ১২ হাজার ৬৪১ অভিযোগের মধ্যে আট হাজার ২২১ জনকে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রযুক্তিগত ও আইনগত পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, এক বছরে যারা অভিযোগ দিয়েছেন তাদের মধ্যে ভুয়া আইডি ব্যবহার করে হয়রানির অভিযোগ সবচেয়ে বেশি, যা মোট অভিযোগের ৪৩ শতাংশ বা পাঁচ হাজার ৪৭৫ জন। এ সময়ের মধ্যে ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে এক হাজার ৮৮৪ জন নারীকে। আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও পাঠিয়ে হয়রানি করা হয় ৯৯২ জনকে। অন্যান্য উপায়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন এক হাজার ৫১৮ জন। অভিযোগকারীর শতকরা ১৬ ভাগ ১৮ বছরের কম বয়সী। শতকরা ৫৮ ভাগ ভুক্তভোগীর বয়স ১৮  থেকে ২৪ বছর। ২৫-৩০ এর মধ্যে ভুক্তভোগী ২০ ভাগ এবং ছয় ভাগ ভুক্তভোগীর বয়স ৪০ বছরের বেশি। অনুষ্ঠানে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজি, ডিআইজি এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি এবং পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের সেবাগ্রহীতারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সারা দেশ থেকে বাংলাদেশ পুলিশের সব ইউনিট ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *