নির্মাতা নুরুল আলম আতিকের কাজ নিয়ে সবার ব্যাপক আগ্রহ। যেখানে একটি সিনেমার নাম দর্শকের কাছে পরিচিত করতে নানা ধরনের প্রচার-প্রচারণা করা হয়, সেখানে এই নির্মাতার সিনেমার নাম এমনিতেই সবার মুখে মুখে ফেরে। যেমন ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’। ছয় বছর আগে এ সিনেমাটি নির্মাণের ঘোষণা দেন আতিক। আর তখন থেকেই নামটি সবার কাছে পরিচিত। অবশেষে সেই সিনেমা সেন্সর ছাড়পত্র পেল। ৭ নভেম্বর সেন্সর পায় সিনেমাটি।
এত দিন পর ছবিটি সেন্সর পাওয়ায় অনেকে ভাবছেন এটি পুরনো ছবি। বিষয়টি মোটেও তা নয়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আতিকের মতো মেধাবী নির্মাতার ছবি প্রযোজনার জন্য সঠিক প্রযোজক এখনো তৈরি হয়নি। তাই তো এই নির্মাতা ও স্ত্রী নাট্যকার মাতিয়া বানু শুকু একটু একটু করে সিনেমাটির কাজ করেছেন। তা ছাড়া এমনও নয় যে শুধু এই একটি সিনেমা নিয়েই তারা ছয় বছর ব্যস্ত ছিলেন। এর মধ্যে আতিক ‘পেয়ারার সুবাস’, ‘মানুষের বাগান’সহ একাধিক সিনেমার কাজ করেছেন।
আর শুকু তো নিয়মিতই টিভি নাটক লেখা ও পরিচালনায় ব্যস্ত। ফলে ছয় বছর আগে ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’র নাম সবাই জেনে গেলেও এর শ্যুটিং মূলত শুরু হয় গত বছর। সে হিসাবে ছবি সেন্সর পেতে আহামরি দেরি হয়নি। করোনাকালে শুধু এ ছবিই নয়, বিশে^র অনেক ছবিই মুক্তির তারিখ কমপক্ষে দেড়-দুই বছর পিছিয়েছে।
নুরুল আলম আতিক বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের গল্পের এ সিনেমাটি আমরা অনেক বেশি মানুষকে দেখাতে চাই। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে এটা আমাদের নিবেদন।’ ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে নির্মাতার। পান্ডুলিপি কারখানা প্রযোজিত ছবিটি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পায়। এ সিনেমার অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা। তিনি বলেন, ‘ছবিটি নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী।
এর প্রথম কারণ, নির্মাতা নুরুল আলম আতিক। তিনি চাইলেও একটি খারাপ সিনেমা বানিয়ে ফেলতে পারবেন না। সিনেমা নিয়ে আর প্যাশনের জায়গা এতখানি। তা ছাড়া প্রথমবার ছবিটির গল্প শুনেই আমি ভীষণ আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি। কারণ এটি মুক্তিযুদ্ধকে আমাদের সামনে একেবারেই ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ছবিটির সঙ্গে আমি যুক্ত একেবারে শুরু থেকেই। তখন আমার প্রথম সিনেমা অনিমেষ আইচ পরিচালিত ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’-এর শ্যুটিং করছিলাম। ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’র গল্প পড়ে একাধিক চরিত্রের জন্য অডিশন দিয়েছিলাম।
তবে মনে মনে ঠিক করেছিলাম, সুযোগ হলে পদ্ম চরিত্রেই অভিনয় করব। কারণ, ‘ভয়ংকর সুন্দর’-এর নয়নতারার পর এমন একটি চরিত্রে পর্দায় আসতে চাইছিলাম, যেটি আমাকে একেবারেই ভিন্নভাবে উপস্থাপন করবে। আমি সৌভাগ্যবান যে সেই চরিত্রের জন্য আমাকে চূড়ান্ত করেন নির্মাতা ও প্রযোজক। নির্মাতা আতিক বলেছেন, এই ছবিতে পদ্মই একমাত্র মুক্তিযোদ্ধার চরিত্র। ছবিতে হয়তো তাকে যুদ্ধ করতে দেখা যাবে না, কিন্তু কেন পদ্মকে মুক্তিযোদ্ধা বলা হয়েছে, সেটি দর্শক স্পষ্টভাবেই বুঝতে পারবেন।’’
ভাবনা বলেন, ‘‘এটিই আমার প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। ছোটবেলা থেকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে আবেগ কাজ করে তাতে এমন একটি মুক্তিযুদ্ধের গল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়েছিলাম, যেটি আসলে স্বাধীনতার এত বছর পরও অন্য রকম আবেদন তৈরি করবে। মুক্তিযুদ্ধকে আলাদা অ্যাঙ্গেল থেকে দেখাবে। ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ তেমনই একটি গল্প নিয়ে নির্মিত। আর আমার চরিত্র পদ্মর যে গভীরতা, সেটি এককথায় অনবদ্য।
এই ছবিতে যারা অভিনয় করেছেন তা দেখেই দর্শক বুঝতে পারবেন কী মানের কাজ হয়েছে। সব মিলিয়ে আমি বেশ এক্সাইটেড। যদিও দর্শকের কাছে কী ভালো লাগে আর কী লাগে না, সেটি আমি খুব একটা বুঝি না। এ বিষয়টি গোলমেলে লাগে আমার কাছে। কিন্তু আমি হতাশ হতে চাই না। এখন সিনেমার ভাষা বদলেছে। দর্শকের রুচিরও নিশ্চয়ই পরিবর্তন হয়েছে। তারা কোন সিনেমাটি ভালো তা হয়তো এখন বুঝেই প্রেক্ষাগৃহে যাবেন।’’
ভাবনা ছাড়াও এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন একঝাঁক তারকাশিল্পী। বিভিন্ন চরিত্রে রয়েছেন লায়লা হাসান, আহমেদ রুবেল, আশীষ খন্দকার, ইলোরা গওহর, জ্যোতিকা জ্যোতি, দিলরুবা দোয়েল, স্বাগতা, দীপক সুমন, শিল্পি সরকার অপু, জয়রাজ, অশোক ব্যাপারী প্রমুখ।