প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল তিউনিসিয়া

প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল তিউনিসিয়া

আন্তর্জাতিক
উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কায়েস সাঈদের ক্ষমতা ‘কুক্ষিগত’ করার ঘটনার প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে তিউনিসিয়ায়। দেশ পরিচালনায় ডিক্রি জারির প্রতিবাদে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করেন তারা। কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, গতকাল রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানী তিউনিসের হাবিব বোরগুইবা অ্যাভিনিউতে হাজার হাজার বিক্ষোভাকারী জমায়েত হন। তারা কায়েস সাঈদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং পদত্যাগ দাবি করেন। তারা অভ্যুত্থানের পতন চান।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘তিনি (সাইদ) এক স্বৈরশাসক যিনি বিপ্লবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং গণতন্ত্রের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তিনি সব ক্ষমতা হাতে নিয়েছেন। এটি অভ্যুত্থান এবং আমরা রাস্তা থেকেই তা প্রতিহত করবো।’

গত ২৫ জুলাই করোনা পরিস্থিতিতে তিউনিসিয়ায় সৃষ্ট দুর্যোগপূর্ণ অবস্থার জেরে আকস্মিক সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর রাতে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ দুই বছর আগে নির্বাচিত পার্লামেন্ট ৩০ দিনের জন্য স্থগিত, প্রধানমন্ত্রী হিশাম মাশিশিকে বরখাস্ত ও দেশের নির্বাহী ক্ষমতা নিজের হাতে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আদেশ জারি করেন।

পরে ২৩ আগস্ট ‘রাষ্ট্রের জন্য হুমকি’ বিবেচনায় পরবর্তী আদেশ দেয়া না পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত রাখার আদেশ দেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ। অপরদিকে ২২ সেপ্টেম্বর জারি করা এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধানের কিছু অংশ স্থগিত করার মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা জোরদার করেন সাইদ। তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক দলগুলো এই আদেশকে ‘সাংবিধানিক অভ্যুত্থান’ বলে অভিযোগ করে আসছে।

২৬ জুলাই দেশটির বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আননাহদার প্রধান ও পার্লামেন্ট স্পিকার রশিদ গানুশিসহ দলীয় পার্লামেন্ট সদস্য ও সমর্থকরা রাজধানী তিউনিসে পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। অপরদিকে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদের সমর্থকরাও পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হন। এই সময় দুই পক্ষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ। একইসাথে তিনজনের বেশি লোককে প্রকাশ্যে জমায়েত হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিলো।
এছাড়া বেশ কিছু মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেন কায়েস সাইদ। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে দেশটিতে গৃহবন্দী করা হয়েছে। তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক দলগুলো প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদের এসব পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে দেশটিতে স্বৈরাচারী শাসন ফিরে আসার শঙ্কায় আছেন।

২০১১ সালে আরব বসন্তের সূচনাকারী দেশ তিউনিসিয়ায় স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জেরে ২৪ বছর দেশটি শাসন করা একনায়ক জাইন আল আবেদীন বিন আলী ক্ষমতাচ্যুৎ হন। এর পর থেকেই গত দশ বছর ভঙ্গুর অবস্থা সত্ত্বেও আরব বিশ্বের একমাত্র গণতান্ত্রিক শাসন উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে চালু ছিলো। সূত্র: রয়টার্স

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *