ভারতের বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশের আলিগড় জেলার নাম পরিবর্তন করে এবার ‘হরিগড়’ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও মঈনপুরী শহরের নাম পরিবর্তন করে মায়ান নগর করার প্রস্তাবও পাশ হয়েছে। গত সোমবার আলিগড় পঞ্চায়েতের ৭২ জন সদস্যের মধ্যে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ৫০ জন। তাদের উপস্থিতিতেই সর্বসম্মতিতে ওই প্রস্তাব পাশ করানো হয়।
এ প্রসঙ্গে আলিগড় জেলা পঞ্চায়েতের চেয়ারম্যান বিজয় সিং বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই বাসিন্দাদের দাবি ছিল আলিগড়ের নাম পরিবর্তন করে যেন হরিগড় করা হয়। জেলা পঞ্চায়েত সেই প্রস্তাব স্বীকার করেছে। এবার এই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। ’
আলীগড়ে জেলা পঞ্চায়েত বোর্ডের সভায় কেহরি সিং এবং উমেশ যাদব আলীগড়ের নাম পরিবর্তন করে ‘হরিগড়’ রাখার প্রস্তাব করেছিলেন, যা উপস্থিত সকল সদস্য সর্বসম্মতিক্রমে পাশ করেন।
অন্যদিকে, আলিগড়ের মতোই মঈনপুরী জেলা পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেও শহরের নাম মায়ান নগর করার প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে। জেলা পঞ্চায়েতের চেয়ারপার্সন অর্চনা ভাদোরিয়া বলেন, ‘পঞ্চায়েতের এক সদস্যই মঈনপুরীর নাম পরিবর্তন করে মায়ান নগর করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সোমবার ২৩ জন সদস্যের সমর্থনে সেই প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে। কেবলমাত্র দু’জন সদস্য এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন।’
এরআগে চলতি মাসেই ফিরোজাবাদের নাম পরিবর্তন করে চন্দ্র নগর করার প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং পঞ্চায়েতে সদস্যদের উপস্থিতিতে সেই প্রস্তাব পাশও করা হয়। উত্তর প্রদেশে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে একাধিক শহর ও জেলার নাম পরিবর্তনের অনুমতি দিয়েছে। এলাহাবাদের নাম পরিবর্তন করে প্রয়াগরাজ করা হয়েছে।
মুঘলসরাইয়ের নাম পরিবর্তন করে হয়েছে দীনদয়াল উপাধ্যায় নগর ও ফৈজাবাদের নাম পরিবর্তন করে করা হয়েছে অযোধ্যা। এভাবে আরও একাধিক জেলার নাম পরিবর্তন করার প্রস্তাব রয়েছে বলে জানা গেছে। মীর্জাপুরের নাম পরিবর্তন করে বিন্ধ্য ধাম, আগ্রার নাম অগ্রবন, সুলতানপুরের নাম কুশ ভবন, আজমগড়ের নাম আর্যগড় এবং গাজীপুরের নাম পরিবর্তন করে গাধিপুরী করার দাবি উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’র সম্পাদক ও কোলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমানুল হক বলেন, ‘বিজেপি’র হাতে আর কোনও তাস অবশিষ্ট নেই। ২০১৪ সালে তাঁরা সুশাসন ও উন্নয়নের কথা বলেছিল। ২০১৯-এ ছিল পাকিস্তান। এবার ২০২২ সালে উত্তর প্রদেশে নির্বাচন। ওরা একদিকে আফগানিস্তান, আরেদিকে ভারতের মুসলিম এই দুটোকে নিয়ে নির্বাচনে লড়তে চাইবে।
যে কারণে ওরা ২০২১-এর জুনে কাতারের দোহাতে তালেবানদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। দ্বিতীয়ত, হিন্দুত্বের তাস খেলা ছাড়া ওদের সামনে আর কোনও উপায় আর নেই। কারণ জোর করে ওরা পঞ্চায়েতগুলো দখল করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু জেলা পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপুল ভোটে মথুরাসহ এমন কোনও জায়গা নেই যে বিজেপি হারেনি। সুতরাং, ওঁরা ভাবছে যে এটা হচ্ছে শেষ কুটো। কিন্তু এই কুটো ভেসে যাবে। লোকে বহুদিন ধরে দেখেছে, এরা হচ্ছে হিন্দুত্বের নামে হিন্দুদের সর্বনাশকারী।
হিন্দুদের অর্থনীতি, ব্যবসা, জীবন জীবিকার অধিকার ধ্বংস করে দিয়েছে। করোনার সময়ে লোকেদেরকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হয়েছে, ভাসিয়ে দিতে হয়েছে, শ্মশানেও পোড়াতে পারেনি। এভাবে তাঁদের ঐতিহ্য ও রীতিনীতিকে রক্ষা করতে পারেনি। রোগীদের অক্সিজেন দিতে পারেনি। সুতরাং, বিজেপি আলীগড়ের নাম পাল্টে হরিগড়, বা ফৈজাবাদের নাম পাল্টে অযোধ্যা করে ভাবছে তারা অক্সিজেন পাবে কিন্তু সেই অক্সিজেন তাদেরকে আর উত্তর প্রদেশের মানুষ দেবে না।
২০২২ সালের নির্বাচনে ওদের বিদায় মিরাকল না হলে অবশ্যম্ভাবী। আলীগড়ের নাম পাল্টেই হোক, আর ‘হরিগড়’ করেই হোক, আর ‘মোদিগড়’ করুক আর ‘যোগিগড়’ করুক, ওদের আর রক্ষা নেই’ বলেও মন্তব্য করেন ড. ইমানুল হক। সূত্র : আনন্দবাজার