রেকর্ড গড়া জয় পেল বাংলাদেশ

রেকর্ড গড়া জয় পেল বাংলাদেশ

খেলাধুলা
একমাত্র টেস্ট ম্যাচের পর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতেও বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পেল না জিম্বাবুয়ে। ব্যাটিংয়ে লিটন দাস ও বোলিংয়ে আলো ছড়ালেন সাকিব। এ দুই তারকার নৈপুণ্যে ১৫৫ রানের বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
২০১৩ সালে বুলাওয়ায়োতে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের আগের সর্বনিম্ন ছিল ১৪৮ রান। ওই ম্যাচেই বাংলাদেশ জেতে ১২১ রানে, যা ছিল সবচেয়ে বড় জয়। এবার ১৫৫ রানের জয় সেটিকে দ্বিতীয়তে নামাল।শুক্রবার হারারে স্পোর্টস ক্লাবে টসে হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৭৬ রান করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে লিটন করেছেন ১০২ রান।

আর রানের লক্ষ্য তাড়ায় সাকিবের ঘূর্ণিজাদুতে ২৮.৫ ওভারে ১২১ রানেই গুটিয়ে গেছে জিম্বাবুয়ে। ৯.৫ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ৫ উইকেট পেয়েছেন সাকিব। জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের শুরু থেকেই চেপে ধরে বাংলাদেশের বোলাররা। টাইগারদের বধ করতে পেসবান্ধব উইকেট বানিয়েছিল স্বাগতিকরা। আর সেই উইকেটেই ঘূর্ণিজাদু দেখিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব।

ব্যাট হাতে তেমন অবদান না রাখতে পারলেও বল হাতে পুষিয়ে দিয়েছেন সাকিব। সাকিবের স্পিনে উইকেট হারিয়েছেন অধিনায়ক টেলর, রায়ান বার্ল , ব্লেসিং মুজারাবানি, রেগিস চাকাভা ও রিচার্ড এনগাভারা। জিম্বাবুয়ের পক্ষে সর্বোচ্চ রান এসেছে চাকাভার ব্যাট থেকে। ৫১ বলে ৫৪ রান করেছেন তিনি। তবে ফিফটির পর চাকাভাকে আর টিকতে দেননি সাকিব।

সাকিবকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় ডিপ মিডউইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ধরা পড়েন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। সাকিবের প্রথম শিকার বিপজ্জনক হয়ে ওঠা টেলর। তার তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলটি মারতে গিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন টেলর। আর তা শর্ট ফাইন লেগে দাঁড়ানো তাসকিন তা লুফে নেন।

সাকিবের পঞ্চম ওভারে আউট হন রায়ান বার্ল। আগের বল কাট করে বাউন্ডারি হাকান বার্ল। পরের বলে সাকিবকে স্লগ সুইপ করে ওড়াতে চাইলেন রায়ান বার্ল। কিন্তু ডিপ ডিমউইকেটে চমৎকার ক্যাচ মুঠোয় নিলেন আফিফ হোসেন।

১৭ বলে ৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন বার্ল। সাকিবের তৃতীয় শিকার ব্লেসিং মুজারাবানি। একটু জোরের ওপরে বল করেন সাকিব। জায়গায় দাঁড়িয়ে সাকিবকে খেলার চেষ্টা করেন মুজারাবানি। কিন্তু বল মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন।

৪ বলে ২ রান করেই ইনিংসের ইতি ঘটে জিম্বাবুইয়ান পেসারের। নিজের শেষ ওভারে রিচার্ড এনগারাভাকে কট বিহাইন্ড করেন সাকিব। ওয়ানডেতে তৃতীয়বারের মতো নেন পাঁচ উইকেট। ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পাওয়া টিমাইসেন মারুমা ব্যাটিংয়ে নামেননি।

এছাড়াও একটি করে উইকেট পেয়েছেন তিন পেসার সাইফউদ্দিন, তাসকিন ও শরিফুল। ২৭৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দলীয় দ্বিতীয় এবং সাইফউদ্দিনের প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। অভিষেক ম্যাচেই শূন্য রানে বোল্ড হয়েছেন জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যান তাদিওয়ানাশে মারুমানি।

সাইফউদ্দিনের ওভারের দ্বিতীয় বলটা অফস্টাম্প থেকে ভেতরের দিকে ঢুকছিল, সেটিই কাট করতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে নিয়েছেন মারুমানি। ৪ রানেই প্রথম উইকেট হারালো জিম্বাবুয়ে। এরপর জিম্বাবুয়ে ইনিংসের পঞ্চম ও নিজের তৃতীয় ওভারে আঘাত হানেন তাসকিন। ওভারের দ্বিতীয় বলে জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যান মাধেবেরেকে ৯ রানে বোল্ড করে তাসকিন। দলীয় ১৩ রানেই দুই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে।

তারপর পাওয়ার প্লের ঠিক পরের ওভারেই আবারও ব্রেকথ্রু পেলো বাংলাদেশ। শরীফুল ইসলামের অফস্টাম্পের বাইরের বলে পুল করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি ডিওন মায়ার্স। স্কয়ার লেগে মোসাদ্দকে হোসেনের হাতে ধরা পড়েছেন তিনি ২৪ বলে ১৮ রান করে। এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫০ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৯ উইকেটে ২৭৬।

ব্যাটিংয়ে নেমে মন্থর শুরু এবং ৭৪ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারালেও লিটন দাসের দৃঢ়তায় পথ হারায়নি বাংলাদেশ। ৮ চারে ১১৪ বলে ১০২ রানের ইনিংস খেলেন লিটন। শেষ দিকে আফিফের ২ ছক্কা ও ১ চারে ৩৫ বলে ৪৫ রানের ইনিংস ভীষণ কাজে দিয়েছে। ৩৩ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। ২৬ রান করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ মিঠুন ১৯ রানে আউট হন।

পঞ্চম উইকেটে ১০৩ বলে ৯৩ রানের জুটি গড়েন লিটন ও মাহমুদউল্লাহ। ষষ্ট উইকেটে আফিফের সঙ্গে ৩৪ বলে ৪০ রানের জুটি গড়েন লিটন। এরপর আফিফ ও মিরাজ মিলে সপ্তম উইকেটে ৪২ বলে ৫৮ রানের জুটি গড়েন।

শেষ ১০ ওভারে ৪ উইকেট হারানোর বিনিময়ে ৭৭ রান তুলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে এক ওভারেই হারিয়েছে ৩ উইকেট। ৪০তম ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ১৯৯। জিম্বাবুয়ের হয়ে ৫১ রানে ৩ উইকেট লুক জঙ্গুয়ের। ২টি করে উইকেট মুজারাবানি ও এনগারাভার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *