বাংলাদেশকে আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম বৃহৎ ‘ইঞ্জিন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। সোমবার দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠার সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে দ্রুততার সঙ্গে উন্নতি করছে। বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্র আছে, যেখান থেকে এই প্রতিবেশী (ভারত) শিক্ষাগ্রহণ করেছে এবং অব্যাহতভাবে করে যাবে।
শ্রিংলা আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন যে, বাংলাদেশি এবং ভারতীয়দের মধ্যে একটি অভিন্ন ভবিষ্যত আছে। ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্কের তিনি ছিলেন একজন শক্তিশালী প্রবক্তা। ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের খবরে এ কথা বলা হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্রিংলা আরো বলেন, আমি সন্তুষ্ট এ জন্য যে, একত্রে আমরা সেই দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলেছি। ভারত ও বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব বজায় রেখেছে।
হর্ষবর্ষন শ্রিংলা আরো বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান এবং তিনি একটি জাতি সৃষ্টি করেছেন। কেউ তাকে বঙ্গবন্ধু বলেন বা জাতির পিতা বলেন। কিন্তু এতে কোনো সংশয় নেই যে, তাকে সবাই বড় এক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করেন, যিনি আক্ষরিক অর্থেই একটি জাতির গন্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের প্রবৃদ্ধি এবং উন্নতির ভিত্তি রচনা করে দিয়েছেন উল্লেখ করে শ্রিংলা আরো বলেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ হচ্ছে বিস্ময়করভাবে। দ্রুত উন্নতি ঘটছে সামাজিক-অর্থনৈতিক সূচকে। ২০২১ সালকে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের একটি বিশেষ বছর হিসেবে উল্লেখ করেন শ্রিংলা। তিনি বলেন, মার্চে বাংলাদেশ সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বছরকে একটি ‘ত্রিবেণী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তা হলো মুজিববর্ষ হিসেবে উদযাপন, বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী।
শ্রিংলা আরো বলেন, যেকোনো ধরনের উগ্রবাদ এবং কঠোরপন্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠের জন্য অধিক অনন্য ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমান বিশ্বের জন্য তার বন্ধুত্ব ও উদারতার বার্তা বিশেষ অনুরণন তুলেছে, যেখানে করোনা মহামারি সৃষ্টি করেছে নানা ফাটল ও বিভক্তি। বঙ্গবন্ধুকে ভারতে সম্মান করা হয়। তার সংগ্রাম, তার শিক্ষা এবং মূল্যবোধ অবিরাম উৎসাহ যোগায়।
এই ‘ত্রিবেণী’ বছরে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠা করা হলো এই মহান নেতার প্রতি, তার জীবন ও তার কর্মের প্রতি উপযুক্ত শ্রদ্ধা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বাংলাদেশ সফরকালে যে উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠার জন্য তার মধ্যে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর অন্যতম। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হলো।
শ্রিংলা আরো বলেন, আমি সংক্ষিপ্ত সময়ের নোটিশে এই চেয়ার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রেসিডেন্ট এবং মহাপরিচালকের নেতৃত্বের ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনকে (আইসিসিআর) অভিনন্দন জানাই। আমি ভবিষ্যতে একটি ‘ইন্ডিয়ান চেয়ার ইন বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা বিবেচনার জন্য আইসিসিআর-এর প্রতি অনুরোধ রাখছি।
আজকের এই অনুষ্ঠান আগামী বছর চমৎকার এক কাকতালীয় ঘটনার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষ পালনের অনুষ্ঠান যখন অব্যাহত রাখবে, তখন ভারত নিজের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ উদযাপন করবে।