অনেক প্রতিক্ষার প্রহর পেরিয়ে অবশেষে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা। একেকটা টুর্নামেন্ট যায়, কিন্তু অপেক্ষা ফুরোয় না। না আর্জেন্টিনার, না লিওনেল মেসির। অবশেষে সব মিলে অপেক্ষার অবসান হয়েছে। । ব্রাজিলের মাটিতে ব্রাজিলকেই হারানোর কঠিন চ্যালেঞ্জ জিতে ২৮ বছরের অপেক্ষার অবসান হলো আর্জেন্টিনার। আনহেল দি মারিয়ার গোলে কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতল লিওনেল স্কালোনির দল।
বাংলাদেশ সময় শনিবার সকালে ফাইনালে ১-০ গোলে জিতেছে লিওনেল স্কালোনির দল। ১৯৩৭ সালের পর কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলকে হারাতে পারল আর্জেন্টিনা। আগের কয়েক ম্যাচে বদলি নেমে আলো ছড়ানো দি মারিয়া শুরুর একাদশে সুযোগ পেয়েই নায়ক। তার গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর রক্ষণ জমাট করে ব্যবধান ধরে রাখে আর্জেন্টিনা, এই টুর্নামেন্টের শুরু থেকে যে কৌশলে খেলে সফল দলটি।
২৮ বছর পর প্রথম কোনো বড় টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতল তারা। সবশেষ ১৯৯৩ সালে কোপা আমেরিকার শিরোপাই জিতেছিল তারা। এবার জিতে স্পর্শ করল টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ১৫ শিরোপা জয়ের রেকর্ডধারী উরুগুয়েকে।
প্রথমবারের মতো দেশের মাটিতে কোপা আমেরিকার শিরোপা জিততে ব্যর্থ হলো ব্রাজিল; আগের পাঁচ আসরেই শিরোপা জিতেছিল তারা। মহাদেশ সেরা টুর্নামেন্টে দেশের মাটিতে তারা হারল ১৯৭৫ সালের পর এই প্রথম। ম্যাচ শুরুর আগে লেজার শো হয় রিও দে জেনেইরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে। পোড়ানো হয় আতশবাজি। আনুষ্ঠানিকতা বলতে এতটুকুই। মাঠে ছিল কিছু দর্শক।
শুরুতে বারবার ফাউলে খেই হারানো ম্যাচে প্রথম ভালো সুযোগটা পান নেইমার। ত্রয়োদশ মিনিটে রিশার্লিসনের পাস পেনাল্টি স্পটের কাছে পেয়ে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি তিনি। প্রতিপক্ষের পায়ে প্রতিহত হয়। ২১তম মিনিটে নিজেদের প্রথম ভালো সুযোগেই স্বাগতিকদের স্তব্ধ করে দেয় আর্জেন্টিনা। নিজেদের অর্ধ থেকে রদ্রিগো দে পলের পাস পেয়ে যান দি মারিয়া। মাঝ পথে বল থামানোর সুযোগ ছিল রেনান লোদির, পারেননি তিনি। পিএসজি মিডফিল্ডার বল রিসিভ করে আগুয়ান গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে পাঠান জালে।
গত বিশ্বকাপের পর এই প্রথম আর্জেন্টিনার হয়ে গোল পেলেন দি মারিয়া। ২০০৫ কনফেডারেশন্স কাপের ফাইনালের পর এই প্রথম কোনো ফাইনালে গোল পেল দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ২৯তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে বাঁকানো শট নেন দি মারিয়া। এবার ব্লক করেন ব্রাজিল অধিনায়ক চিয়াগো সিলভা। চার মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি মেসি।
৪৩তম মিনিটে রিশার্লিসনের ক্রসে মাথা ছোঁয়াতে পারেননি লুকাস পাকেতা। পরের মিনিটে নেইমারের কর্নারে রিশার্লিসনের হেডে দূরের পোস্টে পা ছোঁয়াতে পারেননি কেউ।দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আর্জেন্টিনাকে চেপে ধরে ব্রাজিল। ৫২তম মিনিটে বল জালে পাঠিয়েছিলেন রিশার্লিসন। কিন্তু তিনিই অফসাইডে থাকায় গোল পায়নি স্বাগতিকরা। দুই মিনিট পর প্রায় একই জায়গায় বল পান রিশার্লিসন। এবার তার শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস।
একের পর এক আক্রমণে আর্জেন্টিনার রক্ষণের পরীক্ষা নেয় ব্রাজিল। কিন্তু গোলরক্ষককে সেভাবে ভাবাতে পারেনি তারা। প্রতি-আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলে স্কালোনির দল। তারাও পারেনি এদেরসনের তেমন কোনো পরীক্ষা নিতে।
৮৭তম মিনিটে নেইমারের ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে বুলেট গতির শট নেন গাব্রিয়েল বারবোসা। ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন মার্তিনেস। প্রতি-আক্রমণে ব্যবধান বাড়িয়ে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন মেসি। গোলরক্ষককে একা পেয়েও খুব কাছ থেকে শট নিতে পারেননি তিনি।
যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে রদ্রিগো পলের একটি চেষ্টা দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন এদেরসন। বাকি সময়ে কোনোমতে কাটিয়ে দিয়ে মারাকানায় প্রথমবার কোনো শিরোপা জয়ের উৎসবে মাতে আর্জেন্টিনা।