ইউক্রেনের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে বেলারুশ। বাইরের দেশগুলো থেকে সীমান্ত দিয়ে দেশের ভেতর অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে এমন অভিযোগ এনে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো বলছেন, এটি তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে বিদেশি শক্তিগুলোর প্রচেষ্টার একটি অংশ। খবর বিবিসির।
লুকাশেঙ্কোর অভিযোগ, তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে বিদেশিদের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ছক আবিষ্কার করেছে তার দেশের নিরাপত্তা বাহিনী। তবে এ বিষয়ে তিনি কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, তারা সীমা অতিক্রম করেছে। আমরা তাদের ক্ষমা করতে পারি না।
সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে বেলারুশের স্বাধীনতার ৩০ বছর উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের ভাষণে তিনি অভিযোগ তুলেছেন যে, জার্মানি, লিথুনিয়া, পোল্যান্ড, ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মদদে সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র সরবরাহের চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন ইউক্রেন থেকে বেলারুশে প্রচুর অস্ত্র এসেছে। সে কারণেই তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে পুরোপুরি সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছেন।
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল এবং অন্যান্য বিশ্ব নেতার মুখোমুখি হতে চান লুকাশেঙ্কো। এদিকে ইউক্রেন বলছে, তারা বেলারুশের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে নাক গলাতে আগ্রহী নয়। দেশটি বলছে, ১ হাজার ৮৪ কিলোমিটারের সীমান্ত বন্ধ করে বেলারুশ নিজের দেশের জনগণের বিপদ ডেকে আনছে।
বেলারুশের সঙ্গে দক্ষিণে ইউক্রেনের সীমান্ত, পোল্যান্ড এবং লিথুনিয়ার সঙ্গে পশ্চিমে সীমান্ত, লাটভিয়ার সঙ্গে উত্তরে এবং রাশিয়ার সঙ্গে পূর্বদিকে সীমান্ত অবস্থিত। এর মধ্যে একমাত্র রাশিয়ার সঙ্গে বেলারুশের বন্ধুত্বটপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। এমনকি যে কোনো সমস্যায় রাশিয়া যে বেলারুশকে আগলে রাখে তার প্রমাণও বহুবার পাওয়া গেছে।
১৯৯৪ সালের ২০ জুলাই পূর্ব ইউরোপের দেশ বেলারুশের ইতিহাসের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো। সোভিয়েত পরবর্তী বেলারুশের ইতিহাসে তিনি প্রথম এবং একমাত্র ব্যক্তি যিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। গণতান্ত্রিকভাবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় আসীন হলেও বেলারুশ থেকে সম্পূর্ণরূপে গণতন্ত্রকে মুছে ফেলার কুশিলব হিসেবে তিনি দেশটির সাধারণ মানুষের কাছে নিন্দিত এক ব্যক্তিত্ব।
প্রায় একনায়কতান্ত্রিকভাবে তিনি একটানা পঁচিশ বছরের বেশি সময় ধরে বেলারুশের শাসনকার্য পরিচালনা করছেন। বিভিন্ন সময়ে তার পদত্যাগের দাবিতে দেশটিতে অসংখ্য আন্দোলন হয়েছে, অনেক মানুষ হতাহত হয়েছেন। তবুও এ স্বৈরশাসকের হাত থেকে দুই যুগেও মুক্তি মেলেনি বেলারুশের জনগণের।
বিশ্ব রাজনীতিতেও নিজেকে তুলে ধরেছেন। ইদানিং বলা হয়ে থাকে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে নতুন করে যেভাবে রাশিয়া আবার আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেছে, সেটি সম্ভব হত না যদি না ভ্লাদিমির পুতিন একজন লুকাশেঙ্কোকে কাছে না পেতেন। এ কারণে পুতিন প্রশাসনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এ লুকাশেঙ্কোকে।
সম্প্রতি সরকার সমালোচক এক সাংবাদিককে আটক করতে গ্রিস থেকে লিথুয়ানিয়াগামী একটি ফ্লাইট নিজ দেশে ঘুরিয়ে নেয় বেলারুশ। ফ্লাইটে বোমা থাকার অভিযোগ এনে সেটি বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে ঘুরিয়ে নেয়া হয়। যদিও পরে সেখানে কোনো ধরনের বোমা বা বিস্ফোরক পাওয়া যায়নি।
বেলারুশের নেক্সটা মিডিয়া নেটওয়ার্ক জানায়, ওই ফ্লাইটটিতে তাদের সাবেক সম্পাদক রামান প্রোতাসেভিচ ছিলেন। তাকে আটক করেছে বেলারুশ প্রশাসন। নেক্সটা মিডিয়া নেটওয়ার্ক বেলারুশ সরকারের বড় সমালোচক হিসেবে পরিচিত। এই ঘটনার পর বেলারুশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পশ্চিমা দেশগুলো।