চীনে শুরু হচ্ছে ১০ দিনব্যাপী বার্ষিক কুকুর খাওয়ার উৎসব!

চীনে শুরু হচ্ছে ১০ দিনব্যাপী বার্ষিক কুকুর খাওয়ার উৎসব!

আন্তর্জাতিক
চীনের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় গুয়ানজি প্রদেশের ইউলিন শহরে শুরু হতে যাচ্ছে কুকুরের মাংস খাওয়ার উৎসব। ঐতিহ্য অনুযায়ী শহরবাসী লিচুর সঙ্গে কুকুরের মাংস মিলিয়ে খাবে। তাদের বিশ্বাস, কুকুরের মাংস খেলে সুস্থ থাকা যায় এবং বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যদিও পশু অধিকার কর্মীরা বারবার এই উৎসব বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তবু এ উৎসবে ৫ হাজার কুকুর হত্যা করা হবে এবং সেগুলো ১০ দিন ধরে খাওয়া হবে।

করোনা আবহে বারবার প্রশ্ন উঠেছিল চীনাদের অস্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস নিয়ে। তবে বেপরোয়া চীন। সরকারের প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন ও করোনায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নিয়মকে প্রকাশ্যে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চীনের ইউলিন শহরে শুরু হচ্ছে এ বার্ষিক কুকুরের মাংস উৎসব। চীনের এই ডগ মিট ফেস্টিভ্যাল নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। এখানে পশুর সঙ্গে নিষ্ঠুরতা চলে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকিও আছে। কিন্তু এ ফেস্টিভ্যাল বন্ধে কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। শহরটিতে এখন হত্যার জন্য কুকুর জড়ো করা হচ্ছে। দ্য মিরর-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, উৎসব শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই গুয়াংশি প্রদেশের ইউলিনে হত্যা করা কুকুরছানা বিক্রি শুরু হয়েছে।

হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনালের মতে, প্রাণী অধিকার কর্মীরা সেখানকার বাজারের বিভিন্ন স্থানে হত্যা করা কুকুর বিক্রি হতে দেখেছেন। হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনালের (এইচএসআই) চীন নীতি বিশেষজ্ঞ ড. পিটার লি বলেছেন, করোনাকালে উৎসবের নামে জনবহুল বাজার এবং রেস্তোঁরাগুলোতে কুকুরের মাংস কেনাবেচা এবং খাওয়ার জন্য গণসমাবেশকে অনুমতি দেওয়া জনস্বাস্থ্যের একটি ঝুঁকি তৈরি করেছে। চীনের দুটি শহর শেনঝেন এবং ঝুহাই করোনাভাইরাস মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে কুকুর খাওয়া নিষিদ্ধ করেছে।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে চীন বন্য প্রাণী বেচাকেনার ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কারণ এটি ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে বাদুড় থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে।

১০ বছর আগে লন্ডনে শুরু হওয়া নোটোডগমিট দাতব্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়া ডি ক্যাডেনেট বলেন, ইউলিন কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে দিয়েছে যে পশুদের জীবিত হত্যা এখন অবৈধ এবং এটা করলে বড় জরিমানার সম্মুখীন হতে হবে। আমরা তাদের এই নতুন আইনটি অবিলম্বে প্রয়োগ করার আহ্বান জানাচ্ছি। ২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীন প্রতি বছর ১০ মিলিয়ন কুকুর হত্যা করে। ২০১৯ সালের ইউলিন ডগ মিট ফেস্টিভ্যালের ফুটেজে দেখা গেছে, একটি কুকুরকে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা সারা বিশ্বে ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

চীন সরকারের আইন অনুযায়ী দেশটিতে বণ্যপ্রাণীর সুরক্ষার জন্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে কুকুর ও বাদুড়। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই শুরু হচ্ছে কুকুর নিধনের মহাযজ্ঞ। এই উৎসবের তীব্র বিরোধিতা করে আসছেন পশুপ্রেমীরা। চীনের হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল নামে এক পশুপ্রেমী সংগঠনের বিশেষজ্ঞ পিটার লি জানিয়েছেন, ‘উৎসবের নামে ভিড়েঠাসা বাজার ও রেস্তোরাঁয় কুকুরের মাংস বিক্রির এই আয়োজন জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তায় বড়সড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।’

চীনের মাংসপ্রীতির জেরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উৎপত্তি হয়েছে, এই মতবাদে বিশ্বাসীরা আন্তর্জাতিক স্তরে প্রবল আপত্তি আগেই তুলেছেন। তার জেরে খাদ্যের প্রয়োজনে বন্যপ্রাণী কেনাবেচার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বেইজিং। কিন্তু তা যে জনসাধারণের ওপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি, তা বারবার প্রমাণিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *