চিত্রনায়িকা পরীমণির ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলার ঘটনায় সংসদে বিচার চেয়েছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুন-অর-রশিদ। সোমবার (১৪ জুন) দুপুরে সংসদ অধিবেশন চলাকালে নিজের বক্তব্যে এ বিচার চান তিনি।
এর আগে রোববার (১৩ জুন) রাত ৮টার দিকে ফেসবুকে নাম প্রকাশ না করে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনেন পরীমণি। ওই রাতেই তিনি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দেন।
পরীমনি বলেন, “বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তার এক বন্ধু (অমি) বাসায় আসেন। বাসা থেকে তাকে উত্তরার বোট ক্লাবে (ঢাকা বোট ক্লাব) নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জিমি (ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী)। বোট ক্লাবে যাওয়ার পর সেখানে সাত-আটজনের একটা গ্রুপ ছিল। তাদের মুরব্বি ছিলেন নাসির উদ্দিন (নাসির ইউ মাহমুদ)। তিনি বোর্ড ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচয় দেন। পরীমণিকে চড় থাপ্পড় দেওয়া হয়েছে তার পরনের পোশাক মদ্যপ অবস্থায় টেনে ছেড়া হয়েছে। তার সঙ্গে থাকা জিমিকে গলায় একজনের শার্ট পেঁচিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।”
পরীমণি উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের আরও জানিয়েছেন, ওই ঘটনার পর রাজধানীর বনানী থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেও তাকে সহযোগিতা করা হয়নি। এমনি বাংলাদেশ শিল্পী সমিতিতে অভিযোগ জানিয়েও ফল পাননি বলে অভিযোগ এই চিত্রনায়িকার।
একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যিনি বিষয়টি চেপে যাওয়ার জন্য তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন পরীমণি। তবে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের রূপনগর থানা থেকে পুলিশের কর্মকর্তারা তার বাসায় গিয়েছিলেন অভিযোগ রেকর্ড করার জন্য।
ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান পরীমণি। আর সেকারণে তার বনানীর বাসার সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বনানী থানার একজন উপপরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে ৫ সদস্যের পুলিশ দল সোমবার সকাল থেকে নায়িকা পরীমনির বাসার সামনে অবস্থান করছে। তথ্যটি নিশ্চিত না করেছেন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম মিয়া।
তিনি বলেন, “পরীমণি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, সেকারণে আমরা তার নিরাপত্তা জোরদার করেছি। এরপর যদি তিনি কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা নিশ্চয়ই সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।”
এর আগে রোববার (১৩ জুন) রাত ৮টায় ফেসবুকে নাম প্রকাশ না করে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেন। এসময় তিনি নিরুপায় হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্য প্রার্থনা করেন। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি আলোড়ন সৃষ্টি করে। ওই রাতেই পরীমনি নিজের বনানীর বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করেন গণমাধ্যমের সামনে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পরী বলেন, “গেল বুধবার (৯ জুন) রাতে পারিবারিক বন্ধু অমি ও পরীর পোশাক ডিজাইনার জিমির সঙ্গে বাইরে বের হয়েছিলেন। রাত ১২টার দিকে অমি তাদের নিয়ে ঢাকা বোট ক্লাবে যান। সেখানে মদ্যপানরত কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে পরীর পরিচয় করিয়ে দেন অমি। পরে অমি সেখানে থাকা নাছির উদ্দিন মাহমুদ নামে এক ব্যক্তির কাছে নিয়ে যায়। সে সময় নাছির উদ্দিন মাহমুদ নিজেকে ঢাকা বোট ক্লাবের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন। সেখানে তিনি আমাকে মদ খেতে অফার করেন। আমি রাজি না হলে আমাকে জোর করে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আমাকে চড় থাপ্পড় মারেন। তারপর নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টা করেন।”
ঘটনার পরপরই বনানী থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন পরীমনি। সে সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা তার অভিযোগ রেকর্ড করেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ সময় পুলিশের সাহায্যে পরীমনি হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়েও আতঙ্কবশত চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান বলে জানান।