সিডনি হার্বারের মতো ব্রিজ হচ্ছে

সিডনি হার্বারের মতো ব্রিজ হচ্ছে

বাংলাদেশ
ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হার্বার সদৃশ ব্রিজ। এগারোশ মিটার দীর্ঘ এই ব্রিজ দেখতে হবে ধনুক আকৃতির। নদীর মধ্যে থাকবে না কোনো পিলার। এটাকে দেশের প্রথম মডেল ব্রিজ হিসেবে ধরা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। তবে নতুন প্রযুক্তির এ ব্রিজের পরামর্শক ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

জানা গেছে, প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এতে চীনের নেতৃত্বাধীন এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) ঋণ সহায়তা ১ হাজার ৯৩০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। জানুয়ারি ২০২১ হতে ডিসেম্বর ২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, নতুন প্রযুক্তির এ স্টিল আর্চ (ধনুক) ব্রিজ নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক সেবা পেতে ৮১ কোটি ১৬ লাখ ২৪ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে পরামর্শকের কর্মপরিধি ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) সংযুক্ত করা হয়নি। পরামর্শক সেবার খরচ অত্যাধিক বলে দাবি করেছে পরিকল্পনা কমিশন। তাই ব্যয় কমানোর জন্য সুপারিশ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। সওজ প্রতিনিধি জানান, পরামর্শক সেবা ক্রয়ের বিস্তারিত প্রাক্কলন অভ্যন্তরীণ যাচাই সভায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।

তবে বিস্তারিত আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, সওজ অধিদপ্তর এবং বুয়েটের প্রয়োজনীয় সংখ্যক এক্সপার্টের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতে হবে পরামর্শক ব্যয় নির্ধারণের জন্য। এ কমিটির প্রস্তাবিত ব্রিজের ব্যয় প্রাক্কলন এবং পরামর্শকদের প্রণয়ন এবং পরামর্শক সেবার ব্যয় ৬০ কোটি  টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে পরামর্শকের ধরণ, সংখ্যা, জনমাস প্রাক্কলন করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়। ফলে প্রস্তাবিত ব্যয় থেকে ২১ কোটি টাকার বেশি কমানো হয়ে শুধু পরামর্শক খাতে।

সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন আল রশীদের সভাপতিত্বে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) ভার্চ্যুয়াল সভা হয়। সভায় সুপারিশ করা হয় প্রকল্পের পরামর্শক ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার ।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন আল রশীদ বলেন, দেশে মডেল হিসেবে একটা নতুন প্রযুক্তির ‘স্টিল আর্চ ব্রিজ’ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৮১ কোটি টাকা পরামর্শক খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিলো। তবে অনেক কষ্টে পরামর্শক ব্যয় কমানো হয়েছে। এর পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে আনার সুপারিশ করেছি। আমাদের সুপারিশ মতো এলেই প্রকল্পটি পরবর্তী ধাপে তোলা হবে। প্রকল্পটি দ্রুত সময়ে একনেক সভায় তোলা হবে, কারণ প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক ঋণ আছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৩৩ দশমিক ০২ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৪৫৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং পুনর্বাসনের জন্য ৯০ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ প্রাক্কলিত ব্যয়ের ভিত্তি এবং পুনর্বাসন ব্যয়ের পরিকল্পনা ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি।

জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ১০ দশমিক ৬৪ লাখ ঘন মিটার মাটির কাজের জন্য ৭৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার  প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের ডিপিপিতে সমজাতীয় প্রকল্পের তুলনামূলক বিবরণীতে অন্যান্য প্রকল্পের তুলনায় এ প্রকল্পে মাটির কাজের একক ব্যয় বেশি দেখানোর যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

বৈদ্যুতিক সুবিধাসহ সড়ক বাতির জন্য ১৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, ল্যান্ডস্কেপ অ্যান্ড রেস্ট এরিয়ার জন্য ১০ কোটি এবং রোড মার্কিং, সাইন, সিগন্যাল, ব্যারিয়ার, গার্ড রেইল ইত্যাদির জন্য ১৬ কোটি ৫০ লাখ  টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতগুলোর ব্যয় বেশি ধরা হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। ফলে এসব খাতের ব্যয় কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় জেনারেল অ্যান্ড সাইট ফ্যাসিলিটিজ খাতে ১২ কোটি ২১ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে আবাসিক ভবনসহ যানবাহন ভাড়ার সংস্থান রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর প্রকল্পের আওতায় জেনারেল অ্যান্ড সাইট ফ্যাসিলিটিজ খাতের ব্যয় ১০ কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং এর বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন ডিপিপিতে প্রদান করার বিষয়ে একমত পোষণ করেছে কমিশন।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ১৩ জন জনবল নিয়োগের জন্য বেতন ও ভাতাদি খাতে ৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ২০০ জনমাস জনবল আউট সোর্সিংয়ের জন্য ২ কোটি ১৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত জনবলের বিষয়ে অর্থ বিভাগের পদ, জনবলের সংখ্যা, ধরণ নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ প্রকল্পে সংযুক্ত করা হয়নি। অর্থ বিভাগের জনবল কমিটির সুপারিশের আলোকে ডিপিপি পুনর্গঠন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ১১’শ মিটার দীর্ঘ ব্রিজ, ওভারপাস ও এসএমভিটি লেনসহ ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার পৃথক সড়ক নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে ময়মনসিংহ বিভাগের কয়েকটি জেলাসহ এ অঞ্চলের স্থলবন্দর, ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার নিরাপদ ও উন্নত যোগাযোগ সহজ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *