চীনের ক্রমেই বেড়ে চলা বৈশ্বিক প্রভাব মোকাবেলা করতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অবকাঠামো সহায়তা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে বিশ্বের শীর্ষ সাত ধনী দেশের জোট জি-৭। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার ঘোষিত এই পরিকল্পনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের লক্ষ-কোটি ডলারের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের একটি জবাব হতে যাচ্ছে।
ইংল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে কারবিস বে অবকাশযাপন কেন্দ্রে তিন দিনের জি-৭ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে জোট নেতারা এই পরিকল্পনার কথা জানান। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং অন্য জোট নেতারা আশা করছেন, তাদের এই পরিকল্পনা, যা বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড (বি৩ডব্লিউ) নামে পরিচিতি পেয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অবকাঠামো নির্মাণে একটি অংশীদারিত্ব অর্জনের পথ করে দেবে।
এজন্য তাদেরকে চার লাখ কোটি ডলারের তহবিল যোগান দিতে যাচ্ছে জি-৭, যা ২০৩৫ সাল নাগাদ এসব দেশের অবকাঠামো খাতের জন্য দরকার। বাইডেনের প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “এটা শুধু চীনকে মোকাবেলা করার পরিকল্পনা নয়। এখন পর্যন্ত আমাদের মূল্যবোধ, আমাদের মান ও আমাদের ব্যবসা করার পদ্ধতি প্রতিফলিত হয় এমন কোন ইতিবাচক বিকল্প আমরা প্রস্তাব করিনি।”
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাণিজ্য ও মানবাধিকার বিষয়ে চীনের প্রতি একটি অংশীদারিত্বমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছে জি-৭। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ও জেন্ডার ন্যায্যতা ও সাম্য খাতে বেসরকারি খাতের মূলধন কাজে লাগাতে বি৩ডব্লিউ উদ্যোগকে ব্যবহার করবে জি-৭ এবং এর মিত্ররা।
তবে এই পরিকল্পনা কীভাবে কাজ করবে অথবা প্রকৃতপক্ষে কী পরিমাণ মূলধন এটা আসলে ব্যবহার করা হবে- তাৎক্ষণিকভাবে সেসব বিষয় পরিস্কার করা হয়নি। ২০১৩ সালে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) উদ্বোধন করেন শি জিন পিং। এরই মধ্যে একশটিরও বেশি দেশ এই প্রকল্পে চীনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
কারবিস বে-র অবকাশযাপন কেন্দ্রে একত্রিত হয়ে বিশ্বের ধনী গণতন্ত্রের দেশগুলো- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, ক্যানাডা ও জাপান- বিশ্বকে দেখাতে চাইছে যে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিকল্প প্রস্তাব দিতে পারে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন এখন পর্যন্ত, পশ্চিমা বিশ্ব চীনের ‘অস্বচ্ছ, দুর্বল পরিবেশগত ও শ্রম মান এবং নিবর্তনমূলক পদক্ষেপের’ বিপরীতে একটি ইতিবাচক বিকল্প সামনে আনতে পারেনি যা অনেক দেশকেই বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, জি-৭ এর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিদ্যমান উন্নয়নশীল অর্থায়নকে বর্ধিত করতে এবং যৌথভাবে শত শত কোটি ডলার অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করতে সেদেশের কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীনে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করার বিষয়ে এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বেজিংয়ের বিরুদ্ধে একটি কড়া বক্তব্য দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে দৃঢ় বক্তব্য দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। কিন্তু তিন দিনের সম্মেলন শেষে ঘোষণাপত্রে অন্যান্য সদস্য দেশ চীনের বিরুদ্ধে কতোটা কড়া অবস্থান নিতে চাইবে তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
‘বাজার বহির্ভুত অর্থনৈতিক চর্চা’, ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে চীনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে এবং সরবরাহ-শৃঙ্খলের শিথিলতা সমন্বয় করতে একটি অংশীদারিত্বমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে একমত হয়েছেন জি-৭ নেতারা।