অরাজনৈতিক প্রতিজ্ঞা নিয়ে হেফাজতের নতুন কমিটি

অরাজনৈতিক প্রতিজ্ঞা নিয়ে হেফাজতের নতুন কমিটি

বাংলাদেশ
মামুনুল হকসহ আগের কমিটির অধিকাংশ নেতাকে বাদ দিয়ে ও অরাজনৈতিক প্রতিজ্ঞা নিয়ে হেফাজতে ইসলামের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার সকাল ১১টায় রাজধানীর খিলগাঁওয়ে আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কমিটি ঘোষণা করেন হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী।

নতুন কমিটিতে জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির এবং নুরুল ইসলাম জিহাদীকে মহাসচিব করা হয়েছে। বাদ পড়েছেন মামুনুল হক, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জুনায়েদ আল হাবিব ও মুনির হোসেন কাসেমীর মত বিতর্কিত ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।

গত ২৬ মার্চ ও পরবর্তী সময়ে হেফাজতে ইসলামের সহিংস কর্মসূচির প্রেক্ষিতে দেশব্যাপী হেফাজতের নেতাদের গ্রেপ্তার ও নানামুখী চাপে গত ২৫ এপ্রিল হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে পাঁচ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন থেকেই আদৌ হেফাজতের কমিটি ঘোষিত হবে কিনা, ঘোষিত হলেও রাজনৈতিক ও বিতর্কিত ব্যক্তিরা আবারও স্থান পাবে কিনা সে বিষয়ে গুঞ্জন ও অনিশ্চয়তা চলে আসছিল। সংগঠন ও সংগঠনের বাইরে নানামুখী আলোচনা ও সমালোচনার প্রেক্ষিতে হেফাজতে ইসলামের আহ্বায়ক কমিটি একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করে।

তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাজধানীর জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় (খিলগাঁও মাদ্রাসা) উপদেষ্টা কমিটি, খাস কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ে হেফাজতে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। উপদেষ্টা কমিটিতে ১৬ জন, খাস কমিটিতে ৮ জন ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৩৫ জন সদস্য নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগের কমিটিতে খাস কমিটি অংশটি অনুপস্থিত ছিল, যার ফলে নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিতে হেফাজত হিমশিম খাচ্ছিল, সে সুযোগে বিতর্কিত ও রাজনৈতিক সুযোগসন্ধানী ব্যক্তিরা হেফাজতকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছিল।হেফাজতে ইসলামের বর্তমান কমিটিতে ঠাঁই হয়নি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির।

আগের কমিটি দখল করে নিয়েছিল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিশের উচ্চপদধারী ব্যক্তিরা, যা হেফাজতকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছিল। হেফাজত ইসলাম বিভিন্ন ঘটনায় হোচট খেয়ে শেষ অবধি অনুধাবন করতে পেরেছে যে উদ্দেশ্যে হেফাজতে ইসলাম গঠন করা হয়েছিল সে উদ্দেশ্য থেকে তারা বিচ্চু্ৎ হয়েছে। তাই তারা বিতর্কিত ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে প্রবীণ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও বিজ্ঞ আলেমদেরকে দিয়ে নতুন করে হেফাজতে ইসলামকে পুনর্গঠন করার প্রত্যয়ে কমিটি ঘোষণা করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম বলেন, আজ থেকে হেফাজতে ইসলামের অন্যতম প্রধান কাজ হবে সংগঠনের গঠনতন্ত্র তৈরি ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিয়ে সাংগঠনিক কাঠামো পরিচালনা করা। তিনি দাবি করেন, ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলায় হেফাজতের কোনো কর্মী জড়িত ছিল না, বরং হেফাজতকে ব্যবহার করে একটি চক্র নিজেদের ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছিল। মাওলানা নুরুল ইসলাম দোষীদের শাস্তি প্রদানপূর্বক নির্দোষ ও নিরীহ আলেমদের হয়রানি না করে অতি দ্রুত মুক্তি দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন। তবে আমির জুনায়েদ বাবুনগরী শারীরিক অসুস্থতার জন্য উপস্থিত হতে না পারলেও তার সম্মতি ও পরামর্শে কমিটি ঘোষিত হয়েছে বলে হেফাজতের মহাসচিব জানান।

যারা আ‌ছেন হেফাজ‌তের নতুন ক‌মি‌টি‌তে

সোমবার খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদরাসায় সংবাদ সম্মেলনে হেফাজত ইসলামের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। পৃথক উপদেষ্টা কমিটি, খাস কমিটি ও ৩৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে।

পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যারা: 

আমির- আল্লামা মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী। নায়েবে আমির- মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা আবদুল হক (মােমেনশাহী), মাওলানা সালাহ উদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী (দেওনা পীর), মাওলানা মুহিব্বুল হক (গাছবাড়ী, সিলেট), মাওলানা ইয়াহইয়া (হাটহাজারী), মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস (ফরিদাবাদ), মাওলানা তাজুল ইসলাম , মাওলানা মুফতি জসিমুদ্দীন (হাটহাজারী মাদরাসা)।

মহাসচিব- মাওলানা হাফেজ নূরুল ইসলাম (ঢাকা)। যুগ্ম মহাসচিব- মাওলানা সাজেদুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়), মাওলানা আবদুল আউয়াল (নারায়ণগঞ্জ), মাওলানা লােকমান হাকিম (চট্টগ্রাম),মাওলানা আনােয়ারুল করীম (যশাের), মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী।

সহকারী মহাসচিব- মাওলানা জহুরুল ইসলাম, হেফাজ‌তের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বড় ছে‌লে মাওলানা ইউসুফ মাদানী। সাংগঠনিক সম্পাদক- মাওলানা মীর ইদরিস (চট্টগ্রাম)। অর্থ সম্পাদক- মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আলী মেখল। সহ-অর্থ সম্পাদক- মাওলানা মুফতি হাবীবুর রহমান কাসেমী (নাজিরহাট)।

প্রচার সম্পাদক- মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী (সাভার, ঢাকা)। সহ-প্রচার সম্পাদক- মাওলানা জামাল উদ্দীন (কুড়িগ্রাম), দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক- মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সোবহানী, (উত্তরা ঢাকা)। সহ-দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক- মাওলানা ওমর ফারুক (নোয়াখালী)।

সদস্য- মাওলানা মুবারক উল্লাহ (ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া), মাওলানা ফয়জুল্লাহ (পীর মাদানীনগর), মাওলানা ফোরকান উল্লাহ খলীল, মাওলানা মুশতাক আহমদ (খুলনা), মাওলানা রশীদ আহমদ (কিশোরগঞ্জ), মাওলানা আনাস (ভােলা), মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী। মাওলানা  মাহমুদুল আলম (পঞ্চগড়)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *