কার্লোস তেভেজের মাঠের চরিত্র সবার জানা। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার ক্ষমতা থাকার কারণে তাকে বলা হয় ‘এল অ্যাপাচে’ তথা খলনায়ক। মাঠে দুরন্ত পারফর্মেন্সের পাশাপাশি দর্শকদের নজর কাড়ে তাঁর মুখের পোড়া দাগটা। লাতিন আমেরিকা থেকে উঠে আসা ফুটবলারদের গল্প মানেই যেন দারিদ্র্যের ছোঁয়া।
সেখান থেকে জীবনসংগ্রামে জয়ী হয়েই এ পর্যায়ে আসতে হয়। কার্লোস তেভেজও ভিন্ন কেউ নন। তবে তাঁর জীবনটা আরও বেশি কঠিন ছিল। মাত্র ১০ মাস বয়সে গায়ে গরম পানি পড়ে শরীরে তৃতীয় মাত্রার পোড়া ক্ষত সৃষ্টি হয়। এর ফলে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে থাকতে হয় প্রায় দুই মাস। সে দাগ মোছার জন্য চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি হতদরিদ্র পরিবারের।
আর্জেন্টিনাকে ম্যারাডোনা-বাতিস্তুতার পর প্রথম জয়ের স্বাদ দিয়েছিলেন তেভেজই। ক্রেসপো-ওর্তেগারা যে ট্রফির স্বাদ আর্জেন্টিনাকে দিতে পারেননি, তা দিতে সমর্থ হয়েছিলেন। দেশটিকে প্রথম অলিম্পিক সোনা জিতিয়েছেন ২০০৪ সালে।
ক্যারিয়ারের গোধূলি বেলায় আবারও প্রিয় ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন কার্লোস তেভেজ। পরিবারকে সময় দিতে বোকা জুনিয়র্সকে বিদায় বললেন এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। ধারণা করা হচ্ছে এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রায় দুই যুগের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারেরও ইতি টানছেন তিনি।
২০০১, ২০১৫ ও ২০১৮ তিন দফা আর্জেন্টিনার ঐতিহাসিক ক্লাবটির জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন। শুক্রবার (০৪ জুন) এক সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন তেভেজ। এতে তিনি বলেন, ‘শারীরিকভাবে আমি এখনও খেলার জন্য প্রস্তুত। তবে মানসিকভাবে নয়। এখানেই শেষ নয়। আবারও দেখা হবে। জানি না অবসর নিচ্ছি নাকি। যদি ফুটবলে ফিরি তাহলে বোকায় আর দেখা যাবে না।’
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জিতেছেন তেভেজ। জুভেন্টাসের পক্ষে সিরি আ’ ট্রফিতে চুমু খেয়েছেন। ২০০৮ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ী দলের সদস্য ছিলেন। ২০০৪ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে অলিম্পিকে সোনাও জিতেছেন তেভেজ। দুটি লিগ শিরোপা তুলেছেন তৃতীয় দফায় ২০১৮ সালে বোকায় যোগ দিয়ে।
সম্প্রতি বুয়েন্স আর্য়াসের দলটিকে কোপা লিবার্তাদোসের শেষ ষোলতে উঠতে সহায়তা করেছেন তেভেজ। আগামী জুলাইয়ে মহাদেশীয় এই টুর্নামেন্টে ব্রাজিলিয়ান দল অ্যাতলেটিকো মিনেইরোর বিপক্ষের নামার কথা বোকার। তার আগেই বড় সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।
আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৭৩ ম্যাচ খেলেছেন তেভেজ। করেছেন ১৩ গোল। ২০০৬ ও ২০১০ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন লিওনেল মেসির সঙ্গে। তিনবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেছেন। তবু জাতীয় দলের হয়ে কোনও শিরোপা জিততে পারেননি।