আজ দেশের বরেণ্য অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির জন্মদিন। বেঁচে থাকলে তার বয়স হতো ৬৯ বছর। তিনি আমাদের মাঝে নেই ঠিকই, কিন্তু প্রয়াণের পর তিনি আরও বেশি গভীরভাবে মিশে গেছেন সিনেমা, নাটক আর মঞ্চের বাতাসে। এই আঙিনায় হেঁটে চলা প্রতিটি প্রাণের স্পন্দনে। প্রতি মুহূর্তে তার অভাব চিনচিনে ব্যথা দিয়ে যায় সবার মনে।
হুমায়ুন ফরীদি ১৯৫২ সালের ২৯ মে জন্মগ্রহণ করেন। পড়াশোনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। কিন্তু ভেতরে অভিনয়ের প্রতি আজন্ম ভালোবাসা থাকায় জড়িয়ে পড়েন নাট্যচর্চায়। যুক্ত হন ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে। এরপর নিজের দক্ষতা জাহির করে শক্ত জায়গা করে নেন মঞ্চনাটকের ভুবনে।
পাশাপাশি টিভি নাটকেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তার অভিনীত জনপ্রিয় টিভি নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘নীল নকশার সন্ধানে’, কোথাও কেউ নেই’, ‘নিখোঁজ সংবাদ’, ‘হঠাৎ একদিন’, ‘সংশপ্তক’, ‘ভবের হাট’, ‘আবহাওয়ার পূর্বাভাস’, ‘প্রতিধ্বনি’, ‘গুপ্তধন’, ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’, ‘বকুলপুর কত দূর’, ‘সমুদ্রে গাঙচিল’ প্রভৃতি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ধারাবাহিক ‘সংশপ্তক’ নাটকে ‘কানকাটা রমজান’ চরিত্রে অভিনয় করে দেশব্যাপী খ্যাতি লাভ করেন।
চলচ্চিত্রে হুমায়ুন ফরীদির পথচলা শুরু হয় নব্বই দশকে। অল্প সময়ে এখানেও তিনি সাফল্য পান। খল চরিত্রে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন এই অভিনেতা। ওই সময়ে নায়ক-নায়িকার চেয়েও হুমায়ুন ফরীদির দিকেই দর্শকের আকর্ষণ বেশি ছিল। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে, ‘ভণ্ড’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘জয়যাত্রা’, ‘আহা!’, ‘হুলিয়া’, ‘একাত্তরের যিশু’, ‘দহন’, ‘সন্ত্রাস’, ‘ব্যাচেলর’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘শাসন’, ‘দুর্জয়’, ‘আজকের হিটলার’, ‘লড়াকু’, ‘দহন’, প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ প্রভৃতি।
অভিনয়ের জন্য হুমায়ুন ফরীদি জীবদ্দশায় অর্জন করেছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়া নাট্যাঙ্গনে অসামান্য অবদান রাখায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের ৪০ বছর পূর্তিতে তাকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে। ২০১৮ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন হুমায়ুন ফরীদি।