৭ সপ্তাহ পর চালু হলো দূরপাল্লার বাস-লঞ্চ-ট্রেন

৭ সপ্তাহ পর চালু হলো দূরপাল্লার বাস-লঞ্চ-ট্রেন

বাংলাদেশ

চলমান করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ৩০ মে পর্যন্ত লকডাউন বাড়িয়েছে সরকার। তবে সাত সপ্তাহ অর্থাৎ ৪৯ দিন পর আজ সোমবার (২৪ মে) থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে সব ধরনের দূরপাল্লার গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে রোববার (২৩ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

সারাদেশে ২৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন, নয়টি মেইল এক্সপ্রেস ও কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে রেল চলছে, ট্রেন স্যানিটাইজ করা হয়েছে, যাত্রীদের জীবানুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। আজ সোমবার সকাল থেকে ৩টি ট্রেন ছেড়ে যায়। সোমবার (২৪ মে) সকাল সাড়ে ৮টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রেন ছাড়লেও যাত্রীর চাপ কম। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও জিআরপি থানা পুলিশ সামাজিক দূরত্ব মেনে ট্রেনে ওঠার বিষয়টি নিশ্চিত করছে। ট্রেনে একটি করে আসন ছেড়ে দিয়ে বসতে দেখা গেছে যাত্রীদের।

বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ (সোমবার) হতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৫০ শতাংশ আসন খালি রেখে মোট ২৮ জোড়া আন্তঃনগর ও ৯ জোড়া লোকাল/কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু করেছে। ট্রেনগুলোর সাপ্তাহিক অফ-ডে এবং নির্ধারিত স্টপেজ সমূহ বলবৎ থাকবে।

অর্ধেক আসন ফাঁকা থাকলেও কোনো প্রকার ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে না, প্রতিটি ট্রেনের টিকিট অনলাইনে বিক্রয় করা হবে। নন-কম্পিউটারাইজড স্টেশনের টিকিট ওই স্টেশন কাউন্টার হতে ক্রয় করতে হবে।

এদিকে রাজধানীর মহাখালী থেকে ভোরে ছেড়ে গেছে অনেকগুলো বাস। টাঙ্গাইলের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া সাদমান নামে এক যাত্রী বলেন, অনেকদিন ঢাকায় ছিলাম। ব্যস্ততার কারণে যেতে পারেনি। এছাড়া বাসও বন্ধ ছিল। তাই এখন বাড়ি যাচ্ছি। বাস স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলছে।

রোববার (২৩ মে) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এ সংক্রান্ত জরুরি একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে উল্লেখিত মোট আসন সংখ্যার অর্ধেকের (৫০ ভাগ) বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না। কোনোভাবেই সমন্বয়কৃত ভাড়ার (বিদ্যমান ভাড়ার ৬০ ভাগ বৃদ্ধি) অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না। ট্রিপের (যাত্রা) শুরু ও শেষে জীবাণুনাশক দিয়ে গাড়ি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। পরিবহন সংশ্লিষ্ট মোটরযান চালক, অন্যান্য শ্রমিক কর্মচারী ও যাত্রীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে, সকাল থেকেই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। একটি আসন ফাঁকা রেখেই যাত্রী পরিবহণ করা হচ্ছে। লঞ্চ সচল হওয়ায় এ নৌরুটের ফেরিতে যাত্রী চাপ ও ভোগান্তি দুটিই কমেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, সকাল ৭টায় শিমুলিয়াঘাট থেকে বাংলাবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় কয়েকটি লঞ্চ। আবার বাংলাবাজার ঘাট থেকেও লঞ্চ শিমুলিয়াঘাটের দিকে আসছে। তবে নির্দেশনা অনুযায়ী, অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের কথা থাকলেও অধিকাংশ লঞ্চেই মানা হচ্ছে না সে নিয়ম। তবে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কিছুটা কম যাত্রী নেয়া হচ্ছে।

ফরিদপুরগামী যাত্রী তাইজুল ইসলাম বলেন, সরকার সব নৌরুটে লঞ্চ চলাচলের আদেশ দিয়েছে। আসলে করোনা যাদের হওয়ার তাদের ঠিকই হবে। দীর্ঘদিন লঞ্চ বন্ধ থাকায় আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এখন কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।

এদিকে লঞ্চ ছাড়াও নৌরুটে বর্তমানে ১৭টি ফেরি সচল রয়েছে বলে জানিয়ে বিআইডাব্লিউটিসি সূত্র। তবে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রয়েছে।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় গত ৫ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। তখন থেকেই দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ও ট্রেন বন্ধ আছে। ওই বিধিনিষেধের ধারাবাহিকতা চলে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়, যা চলে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। সেটি বাড়িয়ে পরে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। পরে সেই বিধিনিষেধের মেয়াদ ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। এরপর আবার তা ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এবার বিধিনিষেধ ৩০ মে পর্যন্ত বাড়নো হলো। তবে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্তসাপেক্ষে দূরপাল্লার গণপরিহন চালুর অনুমতি দেয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *