জামিন পেলেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম

জামিন পেলেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম

বাংলাদেশ

সরকারি নথি চুরি ও অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে দায়ের করা মামলায় জামিন পেয়েছেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। রোববার (২৩ মে) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বাকী বিল্লাহ মৌখিকভাবে এ আদেশ দেন। ৫ হাজার বন্ডে জামিন পেয়েছেন তিনি। এছাড়া রোজিনা ইসলামকে আদালতে পাসপোর্ট জামা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রোজিনা ইসলামের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আদালত মৌখিকভাবে রোজিনা ইসলামের আন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। তিনি আশা করছেন, দ্রুতই বিচারক লিখিত আদেশ দেবেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রোজিনা ইসলামের পক্ষে জামিন বিষয়ে শুনানি করেন একাধিক আইনজীবী। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষ বিরোধিতা করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক রাষ্ট্রপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ নথি উপস্থাপনসহ জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য আজ রোববার (২৩ মে) দিন ধার্য করেন।

সোমবার (১৭ মে) পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে রোজিনা ইসলামকে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়।

এরপর মঙ্গলবার (১৮ মে) বেলা ১১টার দিকে সিএমএম আদালতে তুলে রোজিনার ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তার রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এদিকে বুধবার রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলা ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশের রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ জানিয়েছিলেন, সকালে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব ডিবিকে দেওয়া হয়েছে। তারাই মামলার পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

বৃহস্পতিবার (২০ মে) সকালে ডিবি কার্যালয়ে এ কথা জানান মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক বলেন, “মামলা তদন্ত করতে কোনো জায়গা থেকে কোনো চাপ নেই। মামলার তদন্তের স্বার্থে যা যা করা দরকার, তার সবই করা হবে। মামলাটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সুন্দরভাবে তদন্ত হবে।”

সাংবাদিক রোজিনার সঙ্গে যা ঘটেছে তা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং কেয়ানের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সঙ্গে যা হয়েছে তা দুঃখজনক। সাংবাদিকরা সরকারের অংশ। সরকারের লুকানোর মতো কিছু নেই।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের গুটিকয়েক কর্মকর্তাদের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের বদনাম শুনতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে আর এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আমাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।”

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখা হবে। তিনি যাতে ন্যায়বিচার পান, সেটি নিশ্চিত করা হবে।

রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে এবং রাতে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভ করেন। এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন। রোজিনাকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। বিষয়টির দিকে নজর রাখা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *