পশ্চিমা বিশ্বকে দেওয়া পুতিনের ‘রেড লাইনের’ তাৎপর্য কী

পশ্চিমা বিশ্বকে দেওয়া পুতিনের ‘রেড লাইনের’ তাৎপর্য কী

আন্তর্জাতিক

গত বুধবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যে ভাষায় যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের শাসিয়েছেন, তার নজির বিরল। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে আচরণে কেউ যদি ‘রেড-লাইন’ অর্থাত্ সীমা অতিক্রম করে, তাহলে তাকে ‘দ্রুত এবং কঠোর’ পরিণতি ভোগ করতে হবে। রাশিয়ার বেঁধে দেওয়া সেই ‘রেড লাইন’ ব্যাখ্যা করেননি পুতিন। তিনি বলেন, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় ভিন্ন ভিন্নভাবে রাশিয়া সেটি বিবেচনা করবে।

এই হুঁশিয়ারি তিনি এমন সময় দিলেন যখন ইউক্রেন সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ এবং রুশ বিরোধী নেতা আলেস্কেই নাভালনিকে আটক করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার তীব্র সমালোচনায় লিপ্ত। পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা অশান্তি চাই না, কিন্তু আমাদের বদান্যতাকে কেউ যদি দুর্বলতা মনে করে, রেড লাইন অতিক্রম করে, তখন আমাদের জবাব হবে দ্রুত এবং তীব্র।

আমরা তখন সীমা-পরিসীমা বা অনুপাতের ধার ধারব না। রাশিয়ার বিরুদ্ধে উস্কা নিদাতারা এমন পরিণতি ভোগ করবে, যে অভিজ্ঞতা আগে তাদের কখনো হয়নি।’ রেড লাইন বলতে প্রেসিডেন্ট পুতিন কী বুঝিয়েছেন, সেই সম্পর্কে পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘বাইরের দেশে আমাদের নিরাপত্তা স্বার্থ, আমাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় নাক গলানো, সেটা নির্বাচন হোক বা অন্য কোনো অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া হোক।’

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই মস্কোর মধ্যে এই সন্দেহ-ভীতি দিনে দিনে জোরদার হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়াকে চিরতরে দুর্বল করে দেওয়ার কৌশল নিয়ে এগিয়ে চলেছে। বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপ এবং সাবেক সোভিয়েত কিছু রাষ্ট্রে ন্যাটো সামরিক জোটের প্রসারকে রাশিয়া তাদের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মনে করে।

‘মস্কো রুলস :হোয়াট ড্রাইভস রাশিয়া টু কনফ্রন্ট ওয়েস্ট’ বইয়ের লেখক কির জাইলসের মতে, রাশিয়া চায় আশপাশের দেশগুলোর ওপর যেন তার কর্তৃত্ব থাকে, দেশগুলো যেন তার প্রভাব বলয়ের মধ্যে থাকে। সেই কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ন্যাটো জোটের সামরিক উপস্থিতিকে রাশিয়া চরম হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে। খবর বিবিসি বাংলার।

পশ্চিমাদের অনেকের মধ্যে একটি ধারণা রয়েছে, যে মূল সমস্যা হচ্ছে পুতিন এবং তার স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা। পশ্চিমা পত্র-পত্রিকায় এবং রাজনীতিকদের মন্তব্যে হরহামেশা শোনা যায়, রাশিয়ার ‘নতুন জার’ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন পুতিন। তিনি বাস্তবতার ধার ধারেন না, বরং ভিন্ন এক জগতে বসবাস করেন। রাশিয়ার ভেতরেও তাকে নিয়ে এমন সমালোচনা আছে।

কিন্তু কির জাইলস মনে করেন, এই ধারণা ভুল। ‘রাশিয়া রাষ্ট্র হিসাবে তাদের স্বার্থ রক্ষায়, মর্যাদা এবং প্রভাব পুনরুদ্ধারের যে নীতি নিয়েছ, পুতিন সেটাই অনুসরণ করছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘পশ্চিমা শক্তিগুলোকে চ্যালেঞ্জ করার শক্তি একসময় তারা হারিয়ে বসেছিল, কিন্তু সেই শক্তি তাদের হাতে অনেকটাই ফিরে এসেছে। ধীরে ধীরে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *