১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা হতে পারে। এই খবরে ঢাকা থেকে গ্রামমুখী হচ্ছেন অনেকে। দূরপাল্লার বাস, যানবাহন বন্ধ থাকলেও যে যেভাবে পারছেন রওনা করছেন গন্তব্যে। ছুটে যাওয়া এই মানুষদের তালিকায় নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যাই বেশি।
সোমবার (১২ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ভাড়ায় প্রাইভেটকার দাঁড়িয়ে রয়েছে। তারা অধিক ভাড়ায় যাত্রী নিয়ে ঢাকার বাইরে রওনা করছেন। এমনকি ঢাকার ভেতরে চলাচলের অনুমতি পাওয়া বাসগুলোও যাত্রী নিয়ে রওনা করছে ঢাকার বাইরে। ট্রাকেও গাদাগাদি করে অনেকেই ছুটছেন গন্তব্যে।
ময়মনসিংহ যাওয়া যাত্রী মহসিন তালুকদার বলেন, “কাজের জন্য ঢাকা থাকছি। এখন সব বন্ধ তাই পরিবারের কাছে ফিরে যাচ্ছি।”টাঙ্গাইলের উদ্দেশে পরিবার নিয়ে রওনা হচ্ছেন রহমত মুন্সী। তিনি বলেন, “ঢাকায় সবকিছুর দাম। লকডাউনে কাজও নেই। বাড়ি ভাড়াও দিতে পারব না। রোজায় চলা মুশকিল হয়ে যাবে। এই জন্য় পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে যাচ্ছি।”
রাজধানীর গাবতলী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যেসব বাস শুধু গাবতলী বা সাভার পর্যন্ত যাওয়ার কথা সেই বাসগুলো যাত্রী নিয়ে ঢাকার বাইরে রওনা করছে। ভাড়ায় প্রাইভেট কারও পাওয়া যাচ্ছে এখানে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাড়িগুলোতে যাত্রী পরিবহন করছে। অতিরিক্ত ভাড়াও আদায় করছে।
বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থেকে এক বাসচালক বলেন, “গণপরিবহন বন্ধ। ঢাকায় থেকে কী করুম। তাই যাত্রী নিয়ে গ্রামে যাই। গণপরিবহন চললে আবার ঢাকা আমু।” ট্রাক চালকরাও সুযোগ বুঝে চড়া দামে যাত্রী নিচ্ছেন। রাত থেকেই এই চিত্র। সকালেও পরিবহনের অপেক্ষায় পথে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সাধারণ মানুষ।
এদিকে ঈদকে সামনে রেখে অনেকেই বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু এই বছর রোজার আগেই লকডাউনের ঘোষণা আসায় বাড়ি ফেরায় ছুটছেন তারা। শত শত মানুষের মধ্যে কেউ রয়েছেন দিনমজুর, কেউ রিকশাচালক, আবার কেউ নির্মাণশ্রমিক। তবে এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকির কোনো চিত্র চোখে পড়েনি।
ঘরমুখী মানুষের এই ঢল করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তাদের কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত হোন তবে গ্রামেও করোনা ছড়িয়ে পড়বে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই বাড়ি ফেরার এই প্রতিযোগিতা এবং লকডাউন শেষে আবারও ঢাকায় ফেরার প্রতিযোগিতায় করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সবাই নিজের জায়গায় অবস্থান করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই এখন একমাত্র সমাধান হতে পারে।
রোববার (৯ এপ্রিল এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত) করোনাভাইরাসে সংক্রমিত সর্বোচ্চ ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় নতুন করে আরও ৫ হাজার ৮১৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
এছাড়া দেশে এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭৫৬ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মোট প্রাণহানি ৯ হাজার ৭৩৯ জন।