রাজধানীর যানজট নিরসন এবং স্বস্তিদায়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে মেট্রোরেল লাইন-৬-এর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ মেট্রোরেলের ১৩ দশমিক ১০ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি ভায়াডাক্টের ওপরে আট দশমিক ৯০ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক প্লিন্থ কাস্টিং করা হয়েছে। আর রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে মেট্রোরেলের সার্বিক অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ৭২ শতাংশ।
উত্তরা-মতিঝিল রুটে মেট্রোরেল নির্মাণে ঋণ দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। নামমাত্র সুদে এ ঋণ দেয়া হলেও সংস্থাটির কিছু শর্ত ছিল। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত ছিল জাপানের কোনো প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটিতে ঠিকাদার হিসেবে কাজ করলে কর ও ভ্যাট অব্যাহতি পাবে। এ শর্তের কারণে মেট্রোরেল প্রকল্পের প্যাকেজ-৫-এর ঠিকাদার পেতে যাচ্ছে কর ও ভ্যাট অব্যাহতি।
জানা গেছে, জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এ সুবিধা দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। প্যাকেজ-০৫-এর আওতায় আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত মেট্রোরেলের ভায়াডাক্ট তথা উড়ালপথ নির্মাণে নিয়োজিত তিন যৌথ ঠিকাদারকে এ সুবিধা দিতে স¤প্রতি চিঠি পাঠানো হয়েছে এনবিআরে।
এতে বলা হয়েছে, ‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬) প্রকল্পের জন্য জাইকার সঙ্গে তিনটি ঋণচুক্তি (নম্বর বিডি-পি৬৯, বিডি-পি৮৭ ও বিডি-পি১০২) এবং তিনটি এক্সচেঞ্জ অব নোটস স্বাক্ষরিত হয়েছে।
স্বাক্ষরিত এক্সচেঞ্জ অব নোটস অনুযায়ী, প্রকল্পের প্যাকেজ নং-সিপি-০৫ বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পের আওতায় নিয়োজিত জাপানিজ জেভি প্রতিষ্ঠান টেক্কেন করপোরেশন-আবদুল মোনেম লিমিটেড-আবে নিক্কো কোগিও কোম্পানি লিমিটেডের পারসোনাল অ্যান্ড করপোরেট ট্যাক্স ও ভ্যাট অব্যাহতির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
এনবিআর চেয়াম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে কর আপিল ও অব্যাহতির ১ম সচিব এবং ভ্যাট নীতির ১ম সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, মেট্রোরেল নির্মাতা সংস্থা ঢাকা গণপরিবহন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিচালককে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা গণপরিবহন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, উত্তরা-মতিঝিল রুটে মেট্রোরেল নির্মাণে ঋণ দিচ্ছে জাইকা।
সংস্থাটির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির আলোকে জাপানি প্রতিষ্ঠান কোনো প্যাকেজে ঠিকাদার হিসেবে কাজ করলে ভ্যাট ও কর অব্যাহতির সুবিধা পাবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতেই এনবিআরকে অনুরোধ করেছে ইআরডি। এর আগেও প্যাকেজ-১-এর ঠিকাদার হিসেবে কাজ করা জাপানি প্রতিষ্ঠানও একই সুবিধা পেয়েছিল।
এদিকে মেট্রোরেল-৬-এর দ্বিতীয় প্যাকেজে (ডিপোর অবকাঠামো নির্মাণ) যৌথভাবে কাজ করছে থাইল্যান্ডের ইটাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ও চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। আর তৃতীয় ও চতুর্থ প্যাকেজে (উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভায়াডাক্ট নির্মাণ) কাজ করছে ইটাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। তবে এ তিন প্যাকেজে কোনো ধরনের ভ্যাট ও কর অব্যাহতি পায়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
উত্তরা থেকে মতিঝিল রুটে চলাচলের জন্য কেনা হয়েছে ২৪ সেট ট্রেন। পর্যায়ক্রমে ট্রেনগুলো দেশে আসবে। প্রথম সেট ২৩ এপ্রিল আসার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় চালান জাপান থেকে ১৫ এপ্রিল রওনা হওয়ার কথা রয়েছে। সেটি ঢাকায় পৌঁছাতে পারে ১৬ জুন। আর তৃতীয় চালান ১৩ জুন রওনা দিয়ে ১৩ আগস্ট পৌঁছাতে পারে। বিভিন্ন চালানে আসা ট্রেনগুলো প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ট্রায়াল রান শুরু করা হবে।
মেট্রোরেল প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয় ২০১২ সালে। তবে নকশা প্রণয়ন শেষে মূল কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জুনে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাইকা ও ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা সরবরাহ করবে বাংলাদেশ সরকার। প্রাথমিকভাবে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণের কথা থাকলেও পরবর্তী সময়ে তা কমলাপুর পর্যন্ত স¤প্রসারণ করা হচ্ছে।