ঢাকা-কাঠমান্ডু শিগগিরই অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি

ঢাকা-কাঠমান্ডু শিগগিরই অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি

বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষরের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারির সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে পিটিএ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। আমরা আশা করছি, চুক্তিটি দ্রুতই স্বাক্ষরিত হবে।’

ঢাকায় সফররত নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারি ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। মূলত এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানাতেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।

মোমেন জানান, দুই রাষ্ট্রপতির বৈঠকে নেপাল তাদের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আমদানি করার জন্য বাংলাদেশকে আহ্বান জানিয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে নৌ ও আকাশপথে যোগাযোগ বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে নেপাল। বিশেষ করে সৈয়দপুর, সিলেট, চট্টগ্রামের বিমানবন্দর ব্যবহারে তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। একইসঙ্গে নৌ-রুট ব্যবহারেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা নীতিগতভাবে সম্মতি দিয়েছি, রাজি হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাক্রমে বাংলাদেশকে আমরা সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গেটওয়ে তথা মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটি হাবে রূপান্তরিত করতে চাই। এজন্য ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তঃসীমান্ত পরিবহন-সংযোগ অবারিত ও সুগম করার নানাবিধ উদ্যোগ চলমান রয়েছে।’

বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) কাঠামো প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এই উদ্যোগে প্রথমে ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হবে। পরে ভুটান যুক্ত হবে।

নেপালের রাষ্ট্রপতির এই সফর দুই দেশের সাংস্কৃতিক ও ভৌগলিক নৈকট্যের ভিত্তির ওপর রচিত বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও বেগবান ও জোরদার করবে বলে আশা প্রকাশ করেন মোমেন।

নেপালের সঙ্গে হওয়া পর্যটন, স্যানেটারি, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং ১৯৭৬ সালের ট্রানজিট চুক্তির আওতায় রোহনপুর ও সিন্দাবাদ রেলস্টেশন নিয়ে সমঝোতা স্মারকের বিভিন্ন উপকারী দিক তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পর্যটন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নেপালে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক প্রেরণকারী দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ পরিপ্রেক্ষিতে পর্যটন সেক্টরে সহযোগিতা নিবিড় করতে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

এটি আমাদের জন্য আনন্দ ও গর্বের বিষয় যে, নেপাল থেকে প্রতি বছর বহুসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী বাংলাদেশের মেডিকেল ও প্রকৌশল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে অধ্যয়ন করতে আসে। এ সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

মন্ত্রী জানান, দুই দেশের মধ্যে ২০২২-২৫ মেয়াদের জন্য একটি সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি স্বাক্ষরিত হয়েছে। নেপালের মানবসম্পদ ও যুব উন্নয়নে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং আইটি সেক্টরেও নেপালকে বিবিধ সহায়তা দেবে বাংলাদেশ।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে নেপাল। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনেও দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও পররাষ্ট্র সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *