আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি

আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারে চলমান সহিংসতার ঘটনায় দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন। একইসঙ্গে দেশটিতে সব ধরনের বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপে একমত হয়েছেন ইউরোপের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। গতকাল রোববার রাতে জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক খবরে এসব তথ্য জানানো হয়।

মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে ভয়াবহ সহিংসতায় অন্তত ১৮ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক দফতর। এছাড়াও আহত হয়েছেন আরও অনেকে। নিহতদের সবাই পুলিশের গুলি, গ্রেনেড ও টিয়ার শেলের আঘাতে মারা গেছেন বলে জানা গেছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নিরাপত্তা বাহিনীর নজিরবিহীন দমন-পীড়ন ও গণ-গ্রেফতার গ্রহণযোগ্য নয়।
এক বিবৃতিতে পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। রবিবারের ঘটনায় সামরিক বাহিনীর প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। একই সঙ্গে হতাহতের ঘটনার জেরে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়েছে জোটটি।

সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে সোমবার প্রায় অচল হয়ে পড়ে মিয়ানমার। বন্ধ থাকে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জান্তা সরকারের হুমকি উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর সোমবারই দেশটিতে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাইরের দুনিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সামনে সমবেত হয় বিক্ষোভকারীরা। মঙ্গলবারও বিক্ষোভের পরিকল্পনা রয়েছে।

গণতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভরত এসব মানুষের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলোর সরকার। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস ব্রাসেলসে বলেছেন, ‘আমরা দাঁড়িয়ে থেকে দেখার জন্য প্রস্তুত নই।’ কূটনৈতিক উদ্যোগ ব্যর্থ হলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে বলে জানান তিনি।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যেসব ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত আছে সেগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে দেশটির দরিদ্র শ্রমিকদের আক্রান্ত করতে পারে এমন সব বাণিজ্য সীমিত করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে জোটটি।

এদিকে গত সোমবার মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকারের আরও দুই জেনারেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোয়ে মিয়ান্ট তুন এবং জেনারেল মং মং কিয়াও এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে সতর্ক করেছে ওয়াশিংটন। এর আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলকারী সরকারের প্রেসিডেন্টসহ বেশ কয়েক জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এদিকে আসিয়ান জোটকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেওয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। এই লক্ষ্যে সমর্থন আদায়ে জোটভুক্ত বিভিন্ন দেশে সফর শুরু করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি। মিয়ানমার সংকট নিযে আসিয়ানের একটি বিশেষ বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। ইন্দোনেশিয়ার প্রস্তাবে বেশ কয়েকটি সদস্য দেশের জোরালো সমর্থন থাকলেও কূটনৈতিক তৎপরতাও চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্র : রয়টার্স, আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *