সারা দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি চলছে। দেশে প্রথম ধাপে আসা ৫০ লাখ টিকা এবং ভারতের দেয়া উপহারের ২০ লাখ ডোজ টিকা থেকে এই পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ লাখ ডোজ টিকা মানুষকে দেয়া হয়েছে। টিকা নিতে গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ১৩ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ। দ্বিতীয় চালানের টিকা চলতি মাসেই সময়মতো চলে আসবে বলে আশা করছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
দ্বিতীয় চালানের টিকা কখন আসবে জানতে চাইলে গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানবজমিনকে বলেন, এখনো তারিখ নির্ধারিত হয়নি। প্রতি মাসেই টিকা আসার কথা রয়েছে। তবে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসার কথা রয়েছে। তিনি জানান, গত মাসে প্রথম ধাপের চালান মাসের শেষ দিকে এসেছিল।
দেশে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উপহার পাওয়া ২০ লাখ ডোজ টিকা আসে ২১শে জানুয়ারি। এরপর ২৫শে জানুয়ারি ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালান দেশে আসে। চুক্তি অনুযায়ী ৩ কোটি টিকা আসবে দেশে। প্রতি মাসে কেনা ৫০ লাখ টিকা আসার কথা রয়েছে।
কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশ যে টিকা পাবে, তার প্রথম চালান আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে পৌঁছাতে পারে। জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হিসাবে কোভ্যাক্স থেকে প্রায় ৭ কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। সংস্থাটি থেকে প্রথম ধাপে আসবে প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ ডোজ টিকা। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, দেশে ৮ থেকে ৯ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় ভ্যাকসিন আনছে দেশের শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মা। বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে সারা দেশের প্রথম ধাপে আসা ভ্যাকসিন পৌঁছে দেয়া হয়। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা বাংলাদেশে দেয়া হচ্ছে। সবাইকে এ টিকার দুটি ডোজ নিতে হবে।
এই টিকা নিরাপদ এবং করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর বলে প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ।গত ২৭শে জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদানের উদ্বোধন করা হয়। এরপর গত রোববার শুরু হয়েছে দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি।
অন স্পট নিবন্ধন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা যা বললেন: অন স্পট টিকার নিবন্ধন বন্ধ করার বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর)-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন বলেন, অন স্পট নিবন্ধনের বিষয়টি তো পরিকল্পনাই ছিল না। এতে করে হাসপাতালে ভিড় বাড়ে।
যারা আগে নিবন্ধন করেছেন তারা ঢুকতে পারছেন না। বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে এতে প্রভাবশালীরা সুযোগ নিয়ে টিকা দিতে পারছেন। সাধারণদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অন স্পট বন্ধ করে ভালো হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে জরুরি প্রয়োজনে বিশেষ করে বয়স্ক এবং যারা প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত নন তাদের জন্য আলাদা রেজিস্ট্রেশন বুথের ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলে এই জনস্বাস্থ্যবিদ মনে করেন।
এই বুথ হাসপাতালের বাইরে করা যেতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এই বিষয়ে জাতীয় পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, অন স্পট নিবন্ধন কেন চালু করলো বা কেনই বা বন্ধ করলো আসলে বুঝতে পারছি না। পরবর্তীতে সরকার এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয় সেটা দেখে মন্তব্য করবো।