প্রতিপক্ষ যে দলই হোক ঘরের মাঠে বরাবরই শক্তিশালী ভারত। তার উপর সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে দুর্দান্ত এক টেস্ট সিরিজ জিতে উড়ছে দলটি। কিন্তু সেই দলটিকে তাদের মাঠে বেশ ভোগাচ্ছে ইংল্যান্ড। প্রথম ইনিংসের বিশাল সংগ্রহের চাপে ভারতীয়রা এখন রয়েছে ফলোঅনে পড়ার শঙ্কায়। সেটি এড়াতে এখনও ১২২ রান করতে হবে স্বাগতিকদের।
ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ে ভারতকে বেশ চাপে রেখেছিলেন জো রুট। প্রথম ইনিংসেই পাহাড়সম সংগ্রহ গড়ে দলটি। ফলোঅন এড়াতেই প্রয়োজন হয় ৩৭৯ রান। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৫৭ রান তুলে তৃতীয় দিন শেষ করেছে ভারত।
চেন্নাইয়ের এএম চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে গতকাল অবশ্য স্বাগতিকদের সূচনাটাই ভালো হয়নি। শুরুতেই তোপ দাগান পেসার জোফরা আর্চার। দুই ওপেনারকেই বিদায় করেন তিনি। ব্যক্তিগত ৬ রানে রোহিত শর্মাকে উইকেটরক্ষক জস বাটলারের আর ব্যক্তিগত ২৯ রানে শুভমান গিলকে জেমস অ্যান্ডারসনের ক্যাচে পরিণত করেন এ পেসার। এরপর তরুণ অফস্পিনার ডম বেসের ঘূণির্র মায়াজালে পড়ে স্বাগতিকরা।
দলীয় ৭১ রানে ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে তুলে নিয়ে বড় ধাক্কাটা দেন বেস। শর্ট লেগে তাকে অলি পোপের ক্যাচে পরিণত করেন। এরপর স্কোরবোর্ডে আর ২ রান যোগ হতে আজিঙ্কা রাহানেও তুলে নেন এ অফস্পিনার। শর্ট কভার ঝাঁপিয়ে পড়ে অসাধারণ এক ক্যাচ লুফে নেন ইংলিশ অধিনায়ক রুট। ফলে ৭৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বড় চাপে পড়ে যায় ভারত।
তবে পঞ্চম উইকেটে চেতশ্বর পুজারাকে নিয়ে সে চাপ সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেন অস্ট্রেলিয়ার ভারতকে নাটকীয় এক জয় এনে দেওয়ার নায়ক রিশাভ পান্ত। ১১৯ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে দলের ইনিংস মেরামত করেন এ দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু এ জুটি ভাঙতেই ফের চাপে পড়ে দলটি।
৩২ রানের ব্যবধানে এ দুই সেট ব্যাটসম্যানকে হারায় ভারত। দুই জনকেই বিদায় করেন বেস। পুজারা অবশ্য নিজেকে কিছুটা দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন। বেসের বলে বলে দারুণ এক পুল করেছিলেন। কিন্তু শর্ট লেগে দাঁড়ানো পোপের কাঁধে লেগে বল চলে যায় শর্ট মিডউইকেটে। যেখানে সহজ ক্যাচ তালুবন্দি করেন রোরি বার্নস। আউট হওয়ার আগে ১৪৩ বল মোকাবেলা করে ১১টি চারের সাহায্যে ৭৩ রান করেন পুজারা।
অন্যদিকে দারুণ ব্যাট করে সেঞ্চুরির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন পান্ত। কিন্তু হঠাৎই ধৈর্যের ইতি ঘটে। কভারের উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ঠিকভাবে ব্যাটে বলে সংযোগ না ঘটায় জ্যাক লিচের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করে ৮৮ বলে ৯টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৯১ রান করেন তিনি।
তবে ভারতীয়দের আশা ধরে রেখে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে দলের হাল ধরেছেন ওয়াশিংটন সুন্দর। এরমধ্যেই ৩২ রানের জুটি গড়ে অপরাজিত রয়েছেন এ দুই ব্যাটসম্যান। সুন্দর ৩৩ ও অশ্বিন ৮ রানে ব্যাট করছেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে দারুণ বোলিং করে ৫৫ রানের খরচায় ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন বেস। অপর দুটি শিকার আর্চারের।
এর আগে সকালে দ্বিতীয় দিনের করা ৮ উইকেটে ৫৫৫ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে ইংল্যান্ড। শেষ দুটি উইকেট হারিয়ে এদিন ২৩ রান যোগ করে দলটি। বেস করে ৩৪ রান। ভারতের পক্ষে ৮৪ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নেন জাসপ্রিত বুমরাহ। ২টি করে উইকেট পান অশ্বিন, ইশান্ত শর্মা ও শাহবাজ নাদিম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (তৃতীয় দিন শেষে)
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস : ৫৭৮ (আগের দিন ৫৫৫/৮) (বার্নস ৩৩, সিবলি ৮৭, রুট ২১৮, স্টোকস ৮২, পোপ ৩৪, বাটলার ৩০, বেস ৩৪, লিচ ১৪*; ইশান্ত ২/৫২, বুমরাহ ৩/৮৪, অশ্বিন ২/১৪৬, নাদিম ২/১৬৭)। ভারত ১ম ইনিংস : ৭৪ ওভারে ২৫৭/৬ (রোহিত ৬, শুভমান ২৯, পুজারা ৭৩, কোহলি ১১, রাহানে ১, পান্ত ৯১, সুন্দর ৩৩*; অ্যান্ডারসন ০/৩৪, আর্চার ২/৫২, বেস ৪/৫৫)।