বৃটেনে বাংলাদেশিদের ঘরে ঘরে আহাজারি: লাশ দাফনে ভোগান্তি

বৃটেনে বাংলাদেশিদের ঘরে ঘরে আহাজারি: লাশ দাফনে ভোগান্তি

আন্তর্জাতিক

করোনাভাইরাসে স্বপ্নের দেশ বৃটেন আজ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। চারদিকে শুধু মৃত্যু আর আক্রান্তের সংবাদ। স্বজন হারানো শোকে কাতর দেশটির মানুষ। বেঁচে থাকা মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। সবার চোখে-মুখে এখন আতঙ্কের ছায়া। কে, কখন আক্রান্ত হন এমন ভয়ে দিন পার করছেন প্রবাসীরা। বর্তমানে বৃদ্ধ থেকে শুরু করে দেড় মাসের শিশুও রেহাই পাচ্ছে না করোনার(স্ট্রেইন)থাবা থেকে। কারো পিতা, ভাই, ছেলে, স্ত্রী, আত্মীয় বা পরিচিত জন করোনা থাবায় প্রাণ হারাচ্ছেন।

আবার কোন কোন পরিবারের পিতাকে কবর দিয়ে এসে মার লাশ কাঁধে নিতে হচ্ছে। কারো ভাইকে মাটি দেয়ার আগেই অপর ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ শুনতে হচ্ছে। একইভাবে পিতা-পুত্রও মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। বলতে গেলে দেশটির প্রায় ঘরে চলছে আহাজারি। বর্তমানে মরণঘাতী করোনা প্রাদূর্ভাব রোধে তৃতীয়বারে মতো লকডাউন আইন জারি রয়েছে বৃটেনে। তারপরও দেশটিতে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
এরমধ্যে হাসপাতালে সিট খালি নাই, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স এর জন্য অপেক্ষা, হাসপাতালে অক্সিজেন নাই, লোকবলের সংকট। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন লন্ডনসহ আশপাশের এলাকার মানুষ। যেখানে বেশিরভাগ বাংলাদেশিদের বসবাস।
আর করোনায়(স্ট্রেইন) বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। বর্তমান লন্ডনসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে এত বেশি রোগী, স্থানীয় হাসপাতাল খালি না থাকায় ৩০০ শত মাইল দূরে (নিউক্যাসল) এ করোনা রোগীকে স্থানান্তর করেতে হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুকুলের বাহিরে যাওয়ায় অনেক অপারেশন স্থগিত করেছে এনএইচএস।বর্তমানে হাসপাতালে ভেন্টিলেটর রোগী ৪ হাজারের উপরে রয়েছেন।

নিউক্যাসেল থেকে সাইফুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশি মানবজমিনের প্রতিবেদককে জানান, আমিও আমার পরিবার করোনায় আক্রান্ত হলেও কয়েক দিন আগে আমরা সুস্থ হয়েছি। এখানে অন্যান্য শহরের চেয়ে  আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম। লন্ডন শহর থেকে অনেক রোগী আমাদের(নিউক্যাসল)হাসপাতাল গুলোতে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রতিদিন  অনেক বাংলাদেশিসহ মুসলিমরা মৃত্যুবরণ করার ফলে লাশের জানাযা,দাফন-কাফন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সময় যত গড়াচ্ছে লাশের মিছিল আরো দীর্ঘ হচ্ছে। মর্গ গুলোতে লাশের সারি। মুসলিমদের জানাযা ও গোরস্থান গুলোতে লাশ দাফনে সিরিয়াল পেতে বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মেশিন দিয়ে মাটি কেটে লাশ দাফন করতে হচ্ছে।

বর্তমানে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এক ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ  করছে। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি রয়েছেন বৃটেনের আটলক্ষ বাংলাদেশি। এ যেন যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থা। যা গত বছরের মার্চের আগেও কেউ কল্পনা করতে পারেনি। এখানে বিএমই কমিউনিটিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।দেশটিতে বর্তমানে পিতা-মাতা সন্তানদের নিয়ে উদ্বেগের শেষ নেই।

আবার বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়েও সন্তানদের উদ্বেগ রয়েছে।বর্তমানে অনেক ব্যবসা বন্ধ, এতে লোকসান হচ্ছে। হাজার হাজার বাংলাদেশির কাজ নেই। অনেকে ঘরে বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। নিজের চলা মুশকিল হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে দেশে রয়েছেন পরিবার-পরিজন। আবার কারো পুরো পরিবার করোনা আক্রান্ত হওয়ায় খাদ্য সংকটের ভূগতে হচ্ছে।

হঠাৎ করোনা ঝড়ে প্রবাসীদের সকল স্বপ্ন পরিকল্পনা লন্ড-ভন্ড হয়ে গেছে। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরা বৃটেনের বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েসন(বিসিএর)সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়জুল হক সকল বাংলাদেশিকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, এ রোগ(করোনাভাইরাস)কারো না হলে কেউ কল্পনা করতে পারবে না কত ভয়াবহ।রোগ থেকে রিকোভারি করা অনেক সময়ের ব্যাপার।

এদিকে, স্বজন হারানোদের আহাজারিতে যখন বৃটেনের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে তখন সরকার হার্ডলাইনে গেছে।গত সোমবার থেকে যে কেউ বৃটেনে ঢুকলে তাকে করোনা নেগেটিভ সনদ দেখাতে হবে।শুধু এখানেই শেষ নয়, দেশে ঢুকার পর ১০ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।একই সাথে লকডাউন আইন অমান্যকারীদের বিরোদ্ধে মাঠে নেমেছে পুলিশ। অনেকে মনে করেন, শুরু থেকে সরকার এমন ব্যবস্থা নিলে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হত না দেশবাসীকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *