আজ ব্যাংক লেনদেন ৩টা পর্যন্ত, বুথ থেকে তোলা যাবে দ্বিগুণ টাকা

ব্যাংক পরিচালক ও এমডিদের সম্পদের হিসাব নেবে : কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বাংলাদেশ

দেশের ব্যাংক খাতের আলোচিত প্রতিটি কেলেঙ্কারিতেই কোনো না কোনোভাবে পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ খুঁজে পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণের ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী হিসেবে উঠে আসছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালক-ব্যাংকারদের নাম।

অভিযুক্ত এসব পরিচালক ও ব্যাংকারদের নামে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দেশে বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশে পাচারেরও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।এ অবস্থায় ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ পরিচালক ও শীর্ষ ব্যাংকারদের সম্পদের বিষয়ে কঠোর হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকের সব পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তার নিম্নতর দুই পদের কর্মকর্তাদের আয় ও সম্পদের তথ্য নিজ নিজ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কাছে জমা দিতে হবে।

এ সম্পদের তালিকায় থাকছে বাণিজ্যিক, আর্থিক, কৃষি, শিল্পসহ অন্যান্য ব্যবসার নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য বিবরণ পাশাপাশি পারিবারিক ব্যবসায়িক স্বার্থসংশ্লিষ্টতার বিবরণও লিখিতভাবে পর্ষদের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক পঞ্জিকা বর্ষ (ক্যালেন্ডার ইয়ার) শেষ হওয়ার পর পরবর্তী বছরের ২০ জানুয়ারির মধ্যে এ সম্পদের পরিসংখ্যান জমা দিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ বছর থেকেই প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান, পরিচালক ও শীর্ষ ব্যাংকারদের সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো শুরু হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ব্যাংকের পরিচালক ও শীর্ষ ব্যাংকারদের সম্পদের তালিকা জমা দেয়ার নির্দেশনাটি অনেক পুরনো ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৮ ধারার ২ উপধারায় এবিষয়টিরউল্লেখরয়েছে। আইনে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা সুস্পষ্ট থাকলেও তা দীর্ঘদিনেও অনুসরণ করা হয়নি। কিছু ব্যাংক এ নির্দেশনা অনুসরণ করলেও তা থেকে বিরত থেকেছে বেশির ভাগ ব্যাংকই।

অন্যদিকেকেন্দ্রীয় ব্যাংকও তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো আইন অনুযায়ী পরিচালক ও শীর্ষ ব্যাংকারদের সম্পদের হিসাব রাখছে কিনা, সে বিষয়টিও এতদিন খতিয়ে দেখেনি। এ অবস্থায় প্রথমবারের মতো এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও শীর্ষ ব্যাংকারদের ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের সম্পদের তথ্য আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিজ নিজ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে দাখিল করতে হবে।

আইনে থাকলেও এতদিন পরিচালক ও শীর্ষ ব্যাংকারদের সম্পদের তথ্য জমা দেয়ার বিষয়টি যথাযথভাবে পালিত হয়নি বলে জানালেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনে শুরু থেকেই পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সম্পদের তথ্য জমা দেয়ার নির্দেশনা আছে।কিন্তু এতদিন ব্যাংকগুলো ঐচ্ছিক কাজ হিসেবে এটি পালন করত। তবে এখন থেকে এ বিষয়ে আর কোনো শৈথিল্য দেখানো হবে না।

কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, গড়ে ১৫ জন করে ধরলেও দেশে ৬১টি ব্যাংকের পরিচালক সংখ্যা ৯০০-এর বেশি।পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তার নিম্নতর দুই স্তরের কর্মকর্তাদের সংখ্যাও অনেক। এতসংখ্যক মানুষের সব সম্পদের বিষয়টি দেখভাল করা কঠিন।

তবে এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত দল ব্যাংকগুলো পরিদর্শনের সময় পরিচালক ও শীর্ষ ব্যাংকারদের সম্পদের তথ্য ঠিকমতো জমা হচ্ছে কিনা, সেটি খতিয়ে দেখবে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো অনলাইনের মাধ্যমে সব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকেও জমা দেবে। এর মাধ্যমে যেকোনো অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তকাজ সহজ হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে পরিচালক ও শীর্ষ ব্যাংকারদের সম্পদের তথ্য জমা দেয়ার বিষয়ে প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। দেশের সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এর অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১এর ১৮ ধারার উপধারা (২) অনুযায়ী, ব্যাংক-কোম্পানির প্রত্যেক পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী ও তার নিম্নতর দুই স্তর পর্যন্ত কর্মকর্তাকে নিজ নিজ বাণিজ্যিক, আর্থিক, কৃষি, শিল্প ও অন্যান্য ব্যবসার নাম, ঠিকানা ও অন্য বিবরণ এবং পারিবারিক ব্যবসায়িক স্বার্থসংশ্লিষ্টতার বিবরণ লিখিতভাবে পরিচালনা পর্ষদের কাছে বার্ষিক ভিত্তিতে দিতে হবে। এ বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হলো।

এতে আরো বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ওই বিধান মানার জন্য প্রত্যেক ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও তার নিম্নতর দুই স্তর পর্যন্ত কর্মকর্তাকে নিজ নিজ বাণিজ্যিক, আর্থিক, কৃষি, শিল্প এবং অন্যান্য ব্যবসার নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য বিবরণ এবং পারিবারিক ব্যবসায়িক স্বার্থসংশ্লিষ্টতার বিবরণ প্রতি পঞ্জিকা বছর শেষে পরবর্তী বছরের ২০ জানুয়ারির মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে দাখিল করতে হবে।

তবে সদ্যসমাপ্ত ২০২০ সালের জন্য এ-সংক্রান্ত বিবরণী চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্যাংকে দাখিল করা যাবে। দাখিলকৃত বিবরণীগুলো ব্যাংকের পরবর্তী পর্ষদ সভায় উপস্থাপন করতে হবে। ব্যাংক-কোম্পানিগুলোর এসব বিবরণী যথাযথভাবে সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

পরিচালক ও শীর্ষ ব্যাংক কর্মকর্তাদের সম্পদের বিবরণী জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।

তিনি বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের বিধান অনুযায়ী আমরা আগে থেকেই পরিচালক ও শীর্ষ ব্যাংকারদের সম্পদ বিবরণী জমা নিচ্ছি।তবে কিছু ব্যাংক এটি করছে না বলে শুনেছি। ব্যাংক খাতে সুশাসনের জন্যই পরিচালক ও শীর্ষ ব্যাংকারদের আয়-ব্যয় ও সম্পদের তথ্যে স্বচ্ছতা থাকা দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন নতুন করে নির্দেশনা দেয়ায় বিষয়টি ত্বরান্বিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *