ট্রাম্পের বিদায়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে ইরান

ট্রাম্পের বিদায়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে ইরান

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প শাসনামলের সমাপ্তির ফলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে ইরান। এ যাত্রায় একটি চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ থেকে বেঁচে গেল মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।উপসাগরীয় অঞ্চলের অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শেষ দিনগুলোতে তিনি হয়তো ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ তৈরি করবেন। খবর বিবিসির।

শুধু তাই নয়, ইরানের বেসামরিক পরমাণু কেন্দ্র এবং অন্য জায়গাতেও তিনি হামলা চালাতে পারেন বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।ওয়াশিংটন থেকে গত বছরের নভেম্বরে পাওয়া বিভিন্ন খবরে এ ধরনের ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছিল যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়তো এ ধরনের সামরিক পথ বেছে নিতে পারেন। এ বিষয়ে তিনি তার সিনিয়র উপদেষ্টাদের মতামতও জানতে চেয়েছিলেন।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, তিনি ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পক্ষের যে পরমাণু চুক্তি হয়েছিল, তাতে আমেরিকাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন।সে রকম হলে ইরানের ওপর আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে হবে এবং চুক্তি মেনে চলার শর্তে ইরানকে তখন অর্থও দিতে হবে।

ইরান নিয়ে ইসরাইল এখনও প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন। ইরানের বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচিই শুধু নয়, তেহরানের পরমাণু অস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির চেষ্টাও তাদের উদ্বেগের কারণ।ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্টজ ইরানের পরমাণু কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেছেন, এটি পরিষ্কার যে ইসরাইলকে সামরিক বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। এ জন্য সম্পদ ও বিনিয়োগের প্রয়োজন এবং তার জন্য আমি কাজ করছি।

যুক্তরাষ্ট্র ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পর ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়াতে থাকে।ইসরাইল মনে করে ইরানের হাতে যদি পরমাণু অস্ত্র চলে আসে, সেটি তাদের অস্তিত্বের জন্যই বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এ কারণে তারা বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেরি না করে ইরানকে এখনই থামাতে।

ইরান সবসময়ই বলে আসছে যে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ কাজে জ্বালানি ব্যবহারের উদ্দেশ্যে। তবে সম্প্রতি দেশটি যে হারে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, সেটি ২০১৫ সালের চুক্তিকে লঙ্ঘন করছে এবং তা নিয়েই নতুন করে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

এর আগে ১৯৮১ সালে ইসরাইল সন্দেহ করেছিল যে ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন পরমাণু অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করছেন। পরে ‘অপারেশন ব্যাবিলন’ নামের অভিযানে এফ ফিফটিন ও এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালিয়ে ইরাকের অসিরাক পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

এর ২৬ বছর পর ২০০৭ সালে তারা সিরিয়াতেও অভিযান চালিয়েছে, যার নাম ছিল অপারেশন আউটসাইড দ্য বক্স। ওই অভিযানে তারা দেইর আল-জুরের কাছে মরুভূমিতে স্থাপিত গোপন একটি প্লুটোনিয়াম চুল্লি ধ্বংস করে দিয়েছিল সেটি চালু করার আগেই।

কিন্তু ইরান আক্রমণের জন্য খুব একটা সহজ টার্গেট নয়। প্রথমত দূরত্ব, সেখানে পৌঁছানো এবং তার পর দেশটির শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া ইসরাইল সেখানে কতটা সফলভাবে আক্রমণ করতে পারবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ ছাড়া বাইডেন প্রশাসন এ ধরনের হামলায় অংশগ্রহণ করতে অনিচ্ছুক।

যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং কোনো উপসাগরীয় আরব দেশ থেকে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালানো হতে পারে এই আশঙ্কায় তেহরান তাদের কিছু কিছু কেন্দ্র পাহাড়ের তলায় মাটির নিচে লুকিয়ে ফেলার জন্য অর্থ বিনিয়োগ করেছে এবং এ বিষয়ে তারা অনেক কাজও করেছে।

এ ধরনের হামলার ব্যাপারে ইরানি লোকজন এত দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে যে, এখন মাটির নিচে তৈরি করা এসব স্থাপনা টার্গেট করাও বেশ কঠিন হবে।

ইরান অনেক বড় একটি দেশ এবং তার পারমাণবিক স্থাপনা বিভিন্ন জায়গায় ভূগর্ভে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *