প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে গ্রাহকের কাছ থেকে বাড়তি মুনাফা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে কিছু কিছু ব্যাংকের বিরুদ্ধে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন গ্রাহক। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি সুদ আদায় করা যাবে না। বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ ব্যাংকের আলাদা হিসাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
গ্রাহককে আর্থিক প্রণোদনা দিতে সুহদার ছাড় দেয়া হয়। এতে প্রণোদনা ঋণের বিপরীতে সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ করা হয় ৯ শতাংশ। এর মধ্যে গ্রাহক পরিশোধ করবেন সাড়ে ৪ শতাংশ আর বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ সরকার ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে।
ব্যাংকগুলো এ প্রণোদনা ঋণ বিতরণ করতে গিয়ে যাতে টাকার সঙ্কটে না পড়ে সে জন্য লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক পুনঃতহবিল আকারে ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করার জন্য ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থাৎ ব্যাংক ১০০ টাকা ঋণ বিতরণ করলে ৫০ টাকা ব্যাংকগুলোকে সরবরাহ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গ্রাহকের কাছ থেকে তা উত্তোলন করে নির্ধারিত সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ফেরত দিবে ব্যাংকগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গ্রাহকের কাছ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদ বা মুনাফা আদায়ের নির্দেশনা থাকলেও কিছু কিছু ব্যাংকের বিরুদ্ধে গ্রাহকের ওপর ৯ শতাংশ সুদ আরোপ করার অভিযোগ উঠেছে। এতে গ্রাহক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে এক সার্কুলারে বলা হয়, সমুদয় সুদ গ্রাহকের ওপর আরোপ করায় গ্রাহক যেন ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সে জন্য সাড়ে ৪ শতাংশ সুদ ব্যাংকের আলাদা হিসাবে সংরক্ষণ করতে হবে। বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করতে হবে।
তবে, ঋণ বা বিনিয়োগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রাহক যথাসময়ে পরিশোধ না করলে সে ক্ষেত্রে ব্যাংক সমুদয় সুদ বা মুনাফা গ্রাহকের ওপর আরোপ করতে পারবে। একই সাথে তা গ্রাহকের দায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
সূত্র জানিয়েছে, কিছু কিছু ব্যাংকের বিরুদ্ধে গ্রাহকের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূত সুদ বা মুনাফা আদায় করার তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে পুনরায় এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ দিকে, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর হাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগযোগ্য তহবিল রয়েছে। এ কারণে বেশির ভাগ ব্যাংকই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ বিতরণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল ব্যবহার করছে না। বরং কিছু কিছু ব্যাংক ইতোমধ্যে নেয়া তহবিল কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ফেরত দিচ্ছে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা ছাড় করা হয়। কিন্তু কয়েকটি ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ইতোমধ্যে ৫২৬ কোটি টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।
নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করায় হয়তো কোনো কোনো ব্যাংক গ্রাহকের ওপর বাড়তি সুদহার চাপিয়ে দিচ্ছে। যেহেতু সরকার সুদহারের ওপর সাড়ে ৪ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সে জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে সমুদয় সুদ অর্থাৎ ৯ শতাংশ আদায় করার সুযোগ নেই।