যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে গভীর হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধ-সংঘাত, দুর্নীতি ও বেকারত্বে এমনিতেই অর্থনৈতিকভাবে প্রবল চাপে ছিল ইরাক। সরকারের এমন ভঙ্গুর অবস্থার সুযোগ নিয়েছে প্রতিবেশী ইরানও। তবে এ সংকট চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে কোভিড-১৯ আসার পর।

বিশেষ করে মহামারির প্রভাবে তেল ও গ্যাসের মূল্য ব্যাপকভাবে হ্রাসও অন্যতম কারণ। সরকারি আয়ের ৯০ শতাংশই যেখান থেকে আসত। এমনকি চরম আর্থিক সঙ্কটে গত বছর সরকার তার কর্মকর্তাদের একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে বেতনও দিতে পারেনি।

অবস্থা বেগতিক দেখে গত মাসে কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটায় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি। এরপর দেশটিতে প্রায় সব পণ্যের দাম দ্রুত বাড়তে শুরু করে। বিশেষ করে আমদানি পণ্যগুলোর ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে দেখা যায়।

আহমেদ তাবাকচালি নামে এক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার বলেন, আমার মনে হয় এটা মারাত্মক। ব্যয় এখন আয়ের অনেক ওপরে চলে গেছে। সরকার প্রত্যাখ্যান করা সত্ত্বেও অনেক ইরাকি এখন মনে করছে, সামনে আরো অবমূল্যায়ন অপেক্ষা করে আছে।

সঙ্কটপূর্ণ এই পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে অর্থ পরিশোধ না করায় দেশটিতে বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দেয় প্রতিবেশী ইরান। ফলে দেশের বড় একটি অংশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। যদিও দেশটির সঙ্গে সাম্প্রতিককালে ইরান সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে আসছে।

হাসান আল-মোজানি, বাগদাদের নিকটবর্তী বাজার জামিলায় অবিক্রীত ১১০ পাউন্ড ওজনের ময়দার বস্তা নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় ছিলেন এই ব্যবসায়ী। বিষণ্ন মনে জানালেন, সাধারণত মাসে ৭০০ থেকে এক হাজার টন ময়দা বিক্রি করেন তিনি। কিন্তু সঙ্কট শুরুর পর সেটি এখন নেমে এসেছে ১৭০ থেকে ২০০ টনে।

বাগদাদের ছোটখাটো এই ব্যবসায়ীর এমন দুর্দশা কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি মূলত দেশটির বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থারই যেন প্রতিচ্ছবি। সামগ্রিকভাবেই অর্থনীতিতে বেশ পিছিয়ে পড়েছে ইরাক।

বিল পরিশোধের সক্ষমতাও এখন তাদের আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে, যা কিনা অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারকেও নিষ্ক্রিয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

ময়দা ব্যবসায়ী মোজানি বলেন, তিনি মূলত ডলারে তুরস্ক থেকে ময়দা আমদানি করেন। কিছুদিন আগে পর্যন্তও তিনি প্রতি বস্তা ২২ ডলার করে বিক্রি করেছেন। কিন্তু মুদ্রা অবমূল্যায়নের প্রতিক্রিয়ায় তাকে এখন মূল্য বাড়িয়ে করতে হয়েছে ৩০ ডলার।

এদিকে চাকরি না পেয়ে স্বাধীনভাবে ব্যবসা শুরু করা খালাফ বলেন, সবাই বেচা-কেনার ক্ষেত্রে ভয় পাচ্ছে। অন্যদিকে বাগদাদের এক রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার বলছেন, দাম বাড়লেও এখন তাদের কাছে ময়দার চাহিদা নেই। মহামারিজনিত কারণ ও অর্থনৈতিক সঙ্কটে রেস্টুরেন্টগুলো এখন বেশির ভাগ সময় খালিই পড়ে থাকে।

পাশাপাশি বাগদাদের পুরনো সূর্য মার্কেটেও দেখা যাচ্ছে না পরিচিত ক্রেতাদের মুখ। যেখানে আহমেদ খালাফ নেইলপলিশসহ কসমেটিক-জাতীয় পণ্য বিক্রি করেন। তিনি বলেন, আমাদের গ্রাহকরা মূলত সরকারি কর্মকর্তা। কিন্তু আপনি দেখতেই পাচ্ছেন যে তাদের কোনো আনাগোনা নেই।

সব মিলিয়ে সংঘাত কবলিত ইরাকি অর্থনীতি এখন গভীর এক অন্ধকারের দিকে ধাবিত হয়েছে। বিশেষ করে মুদ্রার অবমূল্যায়ন তাদের কঠিন এক চ্যালেঞ্জের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সরকারি খাতে বেতন ও পেনশনের জন্য মাসে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৫ বিলিয়ন ডলার।

অথচ সাম্প্রতিক সময়ে মূল আয়ের খাত তেল রপ্তানি থেকে মাসিক রাজস্ব এসেছে মাত্র ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, যা ভবিষ্যতের দিনগুলোয় আরো জটিল হয়ে উঠবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *