ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ট্রাম্পকে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন

ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ট্রাম্পকে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন

আন্তর্জাতিক

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আগুন নিয়ে খেলার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, আগুন নিয়ে খেললে আমাদের প্রত্যুত্তর হবে অতি কঠোর।

নিজের অফিসিয়াল টুইটার পেজে প্রকাশিত এক পোস্টে জাভেদ জারিফ লিখেছেন, ইরাক থেকে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে ইসরায়েল ইরাকে মার্কিন অবস্থানে এমনভাবে হামলা চালানোর ষড়যন্ত্র করছে যাতে তার দোষ ইরানের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে বিদায় বেলায় ট্রাম্পকে একটি বানোয়াট যুদ্ধে জড়ানো যায়।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, ‘আপনাকে (ট্রাম্প) পাতানো ফাঁদের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। আগুন নিয়ে যে কোনো খেলার কঠোর জবাব দেয়া হবে। বিশেষ করে আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বিরুদ্ধে জবাব হবে ভয়ঙ্কর।’

এর আগে মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ গত বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনাদের উসকানিমূলক তৎপরতার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে এক টুইট বার্তায় লিখেছিলেন, ‘ইরান যুদ্ধ না চাইলেও নিজের জনগণ, নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে এক মুহূর্তও দেরি করবে না।’ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মোকাবিলা করার পরিবর্তে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার মিত্ররা শত শত কোটি ডলার খরচ করে মধ্যপ্রাচ্যে বি-৫২ বোমারু বিমান ও সাবমেরিন পাঠিয়েছে।

ইরানের কুদস ফোর্সের সাবেক কমান্ডার লে. জেনারেল কাসেম সোলাইমানির হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্তিকে সামনে রেখে সম্প্রতি ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। গত বুধবার আমেরিকার পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম দু’টি বি-৫২ বোমারু বিমান মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে টহল দিয়ে আবার আমেরিকায় ফিরে গেছে। ওয়াশিংটন ঘোষণা করেছে, ইরানকে সতর্ক করার জন্য এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

এছাড়া, গত সপ্তাহে পরমাণু শক্তিচালিত একটি মার্কিন সাবমেরিন পারস্য উপসাগরে অনুপ্রবেশ করেছে। যদিও গতকাল মার্কিন বিমানবাহী রণতরী নিমিতজ ও এর সহযোগী যুদ্ধজাহাজের বহর এ অঞ্চল থেকে ফিরিয়ে নেয়া হবে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন।

এদিকে, ইরান তাদের ইউরেনিয়ামের মজুত ২০ গুণ বাড়াতে চাচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির পারমাণবিক নজরদারি সংস্থা এই ঘটনাকে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পারমাণবিক চুক্তির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে। এখন পর্যন্ত ইউরেনিয়ামের মজুত ১২ গুণের বেশি বৃদ্ধি করেছে ইরান।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুতের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৪৪৩ কেজি। মূলত পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। তবে ইরান সবসময়ই দাবি করে আসছে যে, তারা শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।

২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, ইরানকে ইউরেনিয়ামের মজুতের পরিমাণ ৪ শতাংশের কম রাখতে হবে। দেশটির ৩.৬৭ শতাংশ ইউরেনিয়াম মজুত থাকার কথা থাকলেও এর চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়েছে। চুক্তির বাইরে পরমাণুর মজুত বাড়িয়েই চলেছে দেশটি।

বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ইরানের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করে আসছে। এছাড়া ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন ট্রাম্প। এসব কারণে ইরান অন্য সময়ে চেয়ে বেশি মাত্রায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়াতে শুরু করে। তবে এখনও পরমাণু চুক্তি নিয়ে আশাবাদী যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া এবং চীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *